বাংলাদেশ

খাবার স্যালাইনের অন্যতম উদ্ভাবক ড. রিচার্ড ক্যাশ আর নেই

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে খাবার স্যালাইন উদ্ভাবনের অন্যতম গবেষক ড. রিচার্ড অ্যালান ক্যাশ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

গত ২২ অক্টোবর (মঙ্গলবার) যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।

এতে বলা হয়, জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও ড. রিচার্ড ক্যাশ বাংলাদেশকে তার দ্বিতীয় বাড়ি (সেকেন্ড হোম) বলে মনে করতেন।  বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিস্তৃত গবেষণা ও প্রভূত অর্জনের পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। সত্তরের দশকে যখন এদেশে প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন শিশু পাঁচ বছর বয়স পেরোনোর আগেই প্রাণঘাতী ডায়রিয়া রোগে মারা যেত, সে সময় তিনি সহ-গবেষক হিসেবে খাবার স্যালাইন ফর্মুলার চূড়ান্ত রূপ দেন। তাদের এই যুগান্তকারী উদ্ভাবন ডায়রিয়া থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর লাখো মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত তৈরি, অর্থ সংগ্রহ এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে 'ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার' প্রদান করা হয়।

ব্র্যাক জানায়, ড. রিচার্ড ক্যাশ ১৯৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চিকিৎসক হিসেবে ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে (বর্তমান আইসিডিডিআর,বি) যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তারা কুমিল্লার মতলব হাসপাতালে এই চিকিৎসার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তৃতভাবে কাজ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার এই চিকিৎসা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্র্যাকের নেতৃত্বে সারাদেশে 'ওটেপ' (ওরাল থেরাপি এক্সটেনশন প্রোগ্রাম) কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক কোটি ২৫ লাখ মাকে হাতেকলমে খাবার স্যালাইন তৈরির শিক্ষা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে আসে।

 

জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্য ড. রিচার্ড ক্যাশ  ২০০৬ সালের 'প্রিন্স মাহিদল পুরস্কার',অর্জন করেন।যেটি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি শীর্ষস্থানীয় স্বীকৃতি।  এছাড়া ২০১১ সালে পেয়েছেন 'ফ্রাইজ প্রাইজ ফর ইম্প্রুভিং হেলথ'পুরস্কার। ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারে ড. ক্যাশ, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করেছেন।

 

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন