মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব কমছে
ইরান-সৌদির যৌথ সামরিক মহড়ায় শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল!
ইরানের হামলার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে ইসরাইল। কড়া প্রতিশোধ নেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে ইরানের কোন টার্গেটে হামলা চালানো হবে, তা জানায়নি নেতানিয়াহু প্রশাসন। ইরানের পরমাণু ও তেল স্থাপনা ইসরায়েলের সম্ভাব্য টার্গেট হতে পারে বলে খবর বেরিয়েছে কয়েক দিন আগেই।
নিজেদের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানোর এমন খবর চাউর হওয়ায় আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে জাতিসংঘে অভিযোগ জানিয়েছে ইরান। সাপ্তাহিক এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেয়ি এ তথ্য জানিয়েছেন। ইরান গেলো ১ অক্টোবর ইসরাইলে ১৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর পরই এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয় বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরাইল।
ইসরাইলের এই সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলার পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন পথে হাঁটছে ইরান।মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বৈরিতা পরিহার করে কূটেনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করছে।এরই ধারাবাহিকতায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ওমান সাগরে যৌথ মহড়া চালিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের শত্রুতা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন থাকার পর এ দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ঐক্য গড়ে উঠেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ মহড়া দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরব ও ইরানের এই ঐক্য ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে সৌদি আরব ও ইরান। ২০১৬ সালে সৌদি আরবের হাতে একজন শিয়া ধর্মগুরুর মৃত্যুদণ্ডের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে যায়। তবে গত বছর গাজার গণহত্যার প্রেক্ষাপটে চীনের মধ্যস্থতায় তারা আবার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। আর এবার শুরু করলো সামরিক মহড়া।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন বৃদ্ধি পেলে সৌদি আরব ও ইরানের এ নতুন সম্পর্ক আরও জোরালো হতে পারে। চলতি মাসের শুরুতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রিয়াদ সফরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তেহরান –রিয়াদের এই সম্পর্ক জোরদার হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণে নতুন দিকনির্দেশনা আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তাঁদের মতে, সৌদি আরব ও ইরানের ঐক্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে, যা উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।]
গাজা ও লেবাননে আগ্রাসনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরান ও সৌদির এই ঘনিষ্ঠতা ভালচোখে দেখছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলকে রক্ষায় এবং ইসরাইলের সঙ্গে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার মিশন নিয়ে বুধবার সৌদি আরবে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। পরে রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও লেবাননে যুদ্ধবন্ধ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
এমআর//