জাতীয়

বিশ্বব্যাপী ৮৫ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি: ইউনেস্কো

ছবি: সংগৃহীত

২০০৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই ১৮ বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে প্রায় ৮৫ শতাংশ মামলা আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়নি। জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে শনিবার (২ নভেম্বর) ইউনেস্কো সকল দেশকে ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের অঙ্গীকার বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এবারের গাজা যুদ্ধে গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বাধিক সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও অপরাধ তদন্তপূর্বক বিচার করতে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নিতে সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ইউনেস্কোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে দায়মুক্তির হার ছয় বছরে মাত্র ৪ পয়েন্ট কমেছে। এর মানে বিশ্বব্যাপী ৮৫ শতাংশ সাংবাদিক হত্যার মামলা অমীমাংসিত থেকে গেছে। সাংবাদিকরা সত্যের সন্ধানে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তাদের সুরক্ষা অপরিহার্য বলে মত দিয়েছে ইউনেস্কো।

জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত দুই বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। এই দুই বছরে ১৬২ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মানে, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধিকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলায় এক বিবৃতিতে বলেন, ২০২২ ও ২০২৩ সালে সত্য অনুসন্ধানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রতি চার দিনে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়।

তিনি দেশগুলোকে ‘এ অপরাধগুলো যাতে বিচারহীন থেকে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি কিছু করার’ আহ্বান জানান।’

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ঠেকাতে অপরাধীদের বিচার ও সাজাদান একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই দুই বছরে সেখানে ৬১ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রাণ হারান। অপরদিকে উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে সবচেয়ে কম সংখ্যক সাংবাদিক প্রাণ হারান। অঞ্চল দুটিতে এই দুই বছর ছয় সাংবাদিক প্রাণ হারান।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ২০১৭ সালের পর ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ফের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে অধিকাংশ সংবাদকর্মী প্রাণ হারান। ২০২৩ সালে ওই অঞ্চলগুলোতে ৪৪ জন সাংবাদিক প্রাণ হারান, যা ওই বছরের মোট নিহতের ৫৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ সালে ১৪ নারী সাংবাদিক প্রাণ হারান, যা মোট নিহত সাংবাদিকদের ৯ শতাংশ। যেখানে কমপক্ষে পাঁচজন ছিলেন ১৫-২৪ বছর বয়সের মধ্যে।

পৃথক দেশ থেকে নিহতদের প্রতিক্রিয়া অনুসারে সাংবাদিকদের প্রায় সব হত্যাকাণ্ডই অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ২০০৬ সাল থেকে ইউনেস্কো চিহ্নিত ৮৫ শতাংশ মামলা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে বা পরিত্যক্ত হয়েছে। এটি ২০১৮ সালে ৮৯ শতাংশ ‘নন-রেজোলিউশন’ হার এবং ২০১২ সালে ৯৫ শতাংশ থেকে কিছুটা উন্নতি। কিন্তু ৭৫টি দেশের মধ্যে ইউনেস্কো দায়েরকৃত মামলার আপডেটের জন্য যোগাযোগ করে ১৭টির কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি এবং নয়টি দেশ তাদের আবেদন গ্রহণ করা ছাড়া আর কিছু করেনি। এমনকি ২১০টি মামলায়, যেখানে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়েছে, তাতেও সময় লেগেছে অন্তত চার বছর।

রিপোর্টে 'বিচার বিলম্বিত করা মানে বিচার অস্বীকার করা’ বলে উল্লেখ করা হয়। ইউনেস্কো সাংবাদিক হত্যার দায়মুক্তির বিরুদ্ধে বার্ষিক প্রচার-প্রচারণা চালায়।

উল্লেখ্য, সংস্থাটি চলতি বছরের ৬ নভেম্বর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সাথে সংকট ও জরুরি পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ওপর একটি বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজন করছে।

এএম/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন