যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ভোটের আগে শেষ ‘বাগযুদ্ধে’ যা বললেন কমলা ও ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সরাসরি নেওয়া হবে ভোট। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সংস্থার করা জরিপের ফল অনুযায়ি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে একজন জয়ের মালা পরবেন। তাই জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে শেষ প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প ও কমলা দু’জনই। নির্বাচনী জনসভাগুলোতে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
প্রধান দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের ভাগ্য মূলতঃ নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের ওপর। এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সমর্থন পেতে তাই শেষ মুহূর্তে দু‘জনই দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। হোয়াইট হাউসে যাওয়ার জন্য জয় পেতে মরিয়া হয়ে একে অপরের কঠোর সমালোচনা করেছেন দুই প্রার্থী।
শেষ দিকের প্রচারণায় একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি খেলায় বসে ছিল না ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান শিবিরের নেতা-কর্মীরাও। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্প ও কমলা শিবিরের বিরুদ্ধে। ভোট প্রভাবিত করতে রাশিয়া তৎপর রয়েছে বলেও জানায় বাইডেন সরকার।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় রোববার মিশিগানে শেষ মুহুর্তের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হারিস। এরাজ্যে দুই লাখ ৪০ হাজার রেজিস্টার্ড মুসলিম ভোটার রয়েছেন। এসব ভোটারদের বেশিরভাগই গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে তাই মিশিগান রাজ্যের এসব ভোটারদের সমর্থন আদায়ে প্রতিশ্রুতি দেন কমলা হ্যারিস। বলেন, প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ অবসানে তিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
কমলা হ্যারিস বলেন, ‘গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং লেবাননে বেসামরিক লোকজনের হতাহত ও ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমানোসহ অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর খুবই কঠিন সময় পার করছে। একটি চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে, জিম্মিদের ইসরাইলে ফিরিয়ে আনতে, গাজায় জনগণের চারম দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে, ইসরাইলকে নিরাপদ করতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণ যাতে তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও আত্মসংকল্পের অধিকার পায় সেগুলো নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আমার ক্ষমতার সবকিছু করবো।’
কমলা হ্যারিসের সমালোচনায় ট্রাম্প
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের জনসভায় কমলা হ্যারিস যেদিন বক্তব্য রাখেন, সেদিন নর্থ ক্যারোলিনা ও পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনি প্রচারণা চালান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের নির্বাচনি সমাবেশে ভন্ডামির জন্য কমলা হ্যারিসের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলায় ও হিটলারের সঙ্গে তুলনা করার জবাবও দেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সমালোচনা করে কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা কখনও তার কথা শুনেছেন? আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ হতে চাই। অন্য দিন তিনি বলেছিলেন-আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই।’ আমাদের প্রতিপক্ষসহ কাউকে আমরা খারাপ কথা বলতে চাই না। ‘উহ! তিনি হিটলার। তিনি একজন হিটলার।’ আপনারা এভাবে কথনও শুনেছেন? তিনি (কমলা) ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন অথচ আমাকে হিটলার বলে আখ্যা দেন।’
কমলা হ্যারিসকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাস্প আরও বলেন, ‘তিনি একজন দুর্নীতিবাজ মানুষ। আমি পুরোপুরি দুর্নীতিবাজ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি সত্যিই তার বিরুদ্ধে দৌড়াচ্ছি না, আমি ডেমোক্র্যাট পার্টি নামক একটি দুর্নীতিবাজ মেশিনের বিরুদ্ধে দৌড়াচ্ছি। এটা সম্পূর্ণ একটি দুর্নীতিবাজ দল।’
এই নির্বাচনী সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়াই পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনের আগেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনেন।
এদিকে, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ইলেক্টোরাল ভোট প্রভাবিত করতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকার শিবির সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিত্তিহীন পোস্ট দিচ্ছে। এতে ভোটাররা অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বিশ্বাসও করছেন।নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগসংক্রান্ত অনেক পোস্ট ট্রাম্পের প্রচারণার মিথ্যা দাবিকে সমর্থন করে। ওই পোস্টে ট্রাম্প শিবির দাবি করে, ২০২০ সালে ট্রাম্প জয়লাভ করে এবং আসছে ৫ নভেম্বর তাকে বিজয় থেকে প্রতারিত করা হতে পারে। অপরদিকে, জো বাইডেন সরকারও অভিযোগ করেছে, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা নষ্ট করতে ভুয়া ভিডিও ছড়াচ্ছে।
এমআর//