আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ইরানে নারী বিক্ষোভে দেড়শ’ জনের মৃত্যু

ইরানের রাজধানী তেহরানের প্রবেশ পথে বিশাল ব্যানারে লেখা, ‘আমরা আর ভয় পাই না। আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ এভাবে নারী অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছেন ইরানের তরুণ-তরুণীরা। দেশটিতে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর চার সপ্তাহ যাবত এই বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

ইরানে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা কুর্দি সংস্থা হেনগাউ এর ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিহত মাসা আমিনির শহর সাকেজের একটি সড়কে  স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা হিজাব হাতে নিয়ে মাথার ওপর দোলাতে দোলাচ্ছে। তাদের স্লোগান ছিল, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’। আরেকটি ভিডিওতে কুর্দিস্তান প্রদেশের রাজধানী সানানদাজেও স্কুলশিক্ষার্থীরা একই স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভকারীদের সমাবেশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপত্তাকর্মীদের দমন-পীড়নের ছবি ছড়িয়ে পড়া বন্ধে ইরানের কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার। এরমধ্যেও  প্রতিবাদী বার্তা ছড়িয়ে দিতে নতুন কৌশল করছেন বিক্ষোভকারীরা। তেহরানের কেন্দ্রস্থলমুখী একটি রাস্তায় ওভারপাসে বিশাল একটি ব্যানার টানিয়েছেন তারা। ব্যানারেলেখা, ‘আমরা আর ভয় পাই না। আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এদিকে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হেনগাউ জানিয়েছে, শহরে শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালাচ্ছে। কুর্দিস্তানের সাকেজ, সানানদাজ ছাড়াও দিভানদারেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা হচ্ছে। পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের মাহাবাদ শহর, তেহরানের কারাজ, কেরমান ও শিরাজ শহরেও বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

তেহরানে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নিকা শাকারামি নামে এক কিশোরী গত ২০ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে তার লাশ উদ্ধার হয়। ইরানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১৬ বছর বয়সী নিকাকে ভবনের ছাদ থেকে শ্রমিকেরা ফেলে হত্যা করা হতে পারে। তবে স্বজনেরা বলছেন, নিকাকে হত্যা করা হয়েছে। গেল বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থায়নে চলা রেডিও ফারদাকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় নিকার মা নাসরিন শাকারামি বলেছেন, তিনি মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন।

ইরানে এই বিক্ষোভের শুরু গত মাসের মাঝামাঝির দিকে। সঠিক নিয়মে হিজাব পরা হয়নি এমন অভিযোগে ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনিকে তেহরান থেকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির পুলিশ। গ্রেফতারের তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় আমিনি মারা যান। এরপর নারী অধিকারের দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলশিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মীরা সহিংস পথ বেছে নিয়েছেন। চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত দেড়শ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইরান সরকার বলছে,  চলমান এই বিক্ষোভে বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতা আছে । গত সপ্তাহে ৯জন বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিকও আছেন। গেল শুক্রবার নিজ দেশের নাগরিকদের ইরান ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে ফ্রান্স সরকার। একই ধরনের নির্দেশনা দেয় নেদারল্যান্ড সরকারও।

বিক্ষোভ দমনে কঠোরতার পাশাপাশি ভিন্ন কৌশলও করছে ইরানী সরকার। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শনিবার তেহরানের আল-জাহরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর অনুষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শত্রুরা ভেবেছিল, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের আশা পূরণ করতে পারবে। তবে তারা এটা জানে না যে আমাদের শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকেরা জেগে আছেন। তাঁরা শত্রুদের মিথ্যা স্বপ্ন পূরণ করতে দেবেন না। তাঁরা জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ নানা ক্ষেত্রে শত্রুদের পরাজিত করবেন।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন