আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় ঘরছাড়া তিনজনসহ গ্রেপ্তার ৫

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তিনজনসহ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ সময় উদ্ধার করা হয় ৫টি উগ্রবাদী বই, প্রায় তিন শত লিফলেট এবং ৫টি ব্যাগ। তাদেরকে রাজধানী যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। 

আটককৃত ব্যাক্তিদের নাম - শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২), নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মো. হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) ও মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে রণি ওরফে জায়দ চৌধুরীকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

র‍্যাব জানায়, গেলো ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গেলো ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। গণমাধ্যমে বহুলভাবে আলোচিত হয় এই ঘটনা। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব নিখোঁজের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‍্যাব আরও জানায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বাসা ত্যাগ করেছে। ইতিমধ্যে গেলো ০৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে চারজন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। পরবর্তীতে গেলো ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আটজন তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গেলো ০৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তিনজন ও নিরুদ্দেশ চারজন তরুণসহ মোট সাতজনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, প্রাথমিকভাবে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদের সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন সময় মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখানো এবং বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেপ্তারকৃত হোসেইন এক বছর পূর্বে, গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল দেড় মাস পূর্বে এবং গ্রেপ্তারকৃত রাকিব দুই মাস পূর্বে নিখোঁজ হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। এ ছাড়া, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদের রাজমিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো।

বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ প্রদান করত।

প্রাথমিকভাবে সংগঠনের সদস্যদের নিকট হতে তাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ছত্র ছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এ ছাড়া তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাআতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষ্যংছড়িতে তিনি প্রায় ২ বছর যাবৎ একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। এ ছাড়া, তিনি অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেছেন বলে জানায়। 

গ্রেপ্তারকৃত নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়।

গ্রেপ্তারকৃত হোসেইন পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রি। সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ সে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃত রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। সে গ্রেপ্তারকৃত হোসেইন এর মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হয়। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে প্রায় ২ মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় বলে জানায়।

গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। সে গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হয়। সে নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয় বলে জানায়।

মেঘ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন