আসাদের পতনে আঞ্চলিক শক্তির নেতৃত্ব ফিরে পেতে কী ছক কষছে ইরান?
ইরানের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবে পরিচিত সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে তার সরকারের পতনে বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে ইরান।ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গা্জায় ইরানের অন্যতম প্রক্সি গ্রপ হামাস যোদ্বারা এবং লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর এখন নড়বড়ে অস্তিত্ব। আর সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতন ইরানের জন্য একটি বড় কৌশলগত পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গেলো ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারের পতনের পর ইরান তার আঞ্চলিক শক্তি ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ এর নেতৃত্বে থাকা অবস্থান হারিয়েছে। ইরানের সমর্থন পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত বাহিনীর মধ্যে কেবল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা বেঁচে থাকলেও, অন্যান্য শক্তিশালী সঙ্গীরা ইরানের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে গেছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের সময় থেকেই ইরান এই অঞ্চলে প্রভাব বজায় রাখার পাশাপাশি ইসরাইলি হামলার প্রতিরোধ করতে মিলিশিয়াদের একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। একাজে কয়েক দশক ধরে সহায়তা করেছে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ এবং পরবর্তীতে তার ছেলে বাশার আল-আসাদ।
মূলত ইরানের শিয়া ধর্মগুরু এবং আসাদের জোট মূলত সুন্নিপ্রধান মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভিত শক্ত করতে সাহায্য করেছিল। মিত্র ইরানের কাছে লেবাননে হেজবুল্লাহ ও অন্যান্য আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সিরিয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট।
বাশার আল-আসাদকে সাহায্য করতে এর আগেও ইরান এগিয়ে এসেছিল। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গণঅভ্যুত্থান গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ার পর যখন বাশার আল আসাদকে দুর্বল বলে মনে হচ্ছিল, সেই সময় যোদ্ধা, জ্বালানি ও অস্ত্র সরবরাহ করেছিল তেহরান।‘ ওই সময় জেনারেলসহ ইরানের দুই হাজার সেনা নিহত হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেছেন, ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় ৩০০০ কোটি ডলার থেকে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিনডলার অর্থ ব্যয় করেছে ইরান।’
বাশার আল আসাদ সরকারের পতনে কৌশলগতভাবে ইরানকে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালে যে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইরান ভবিষ্যতে লেবাননে হিজবুল্লাহকে পুনরায় সহায়তার চেষ্টা করতে পারত এখন সেই পাইপলাইন ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া, সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার মাধ্যমে ইরানকে প্রতীকধর্মী আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
যদিও বাসার আল আসাদের পতনের পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি দাবি করেছেন, ইরান শক্তিশালী ও শক্তিশালী হতে থাকবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ জোট আরও শক্তিশালী হবে। তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান একটি চাপের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে আলোচনা বা কড়া অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তবে টিকে থাকাই এখন এই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অগ্রাধিকার হবে বলে মনে করছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের বিশেষজ্ঞ ড. ভাকিল। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত যে চাপ রয়েছে সেটা থেকে বাঁচতে 'অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের' অবশিষ্টাংশকে শক্তিশালী করা এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুনরায় বিনিয়োগ করতে চাইবে ইরান।
ইরানে কানাডিয়ান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করা কূটনীতিক ডেনিস হোরাক বলেন, ‘এদের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা অনেক কিছুই করতে পারে। হোরাক মনে করেন, ইরান এখনো মজবুত। ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরান তার সেই শক্তি ব্যবহার করতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ইরানকে কাগুজে বাঘ হিসেবে দেখতে নারাজ ডেনিস হোরাক।
এদিকে, আসছে ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। ইরানের বিরুদ্ধে এর আগে ট্রাম্পকে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল। আবার অন্যদিকে আছে ইসরাইল। যে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে তাও প্রমাণ করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় আঞ্চলিক শক্তির নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ইরান।আন্তর্জাতিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে ইরান।
এমআর//