অপরাধ

ডাক্তারের অবহেলায় বাবার মৃত্যুর অভিযোগ, মেয়েকে চাকরির প্রলোভন

রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের দাবি, অস্ত্রপচারে সময় উপস্থিত ছিলেন না সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। সব করেছে সহকারীরা। পরে মৃত্যু হলে বিষয়টি আড়াল করতে নানা গড়িমসি শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ছেলে-মেয়ের সঙ্গে রাজধানীর পান্থপথের গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আসেন ৫৫ বছরের মোশাররফ হোসেন। ভর্তি হন হাসপাতালে। ওপেন হার্ট সার্জারির শেষে চিকিৎসক সফল বললেও বিশ মিনিট পর স্বজনদের কাছে বলা হয় মারা গেছেন মোশাররফ।

নিহতের স্বজনরা জানান, বুকে ব্যথ্যা নিয়ে এক সপ্তাহ আগে গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে ডাক্তার দেখান মোশাররফ। পরে শনিবার অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। অস্ত্রোপাচারের আগে মুহূর্তেও সুস্থ ছিলেন মোশাররফ। তবে অস্ত্রোপাচার শেষে তার নিথর দেহ বের করে আনা হয়।

তারা আরও জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মোশাররফের মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর খবর জানায় রাত সাড়ে ৯টায়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ টাকা ও চাকরির প্রলোভন দেখায় বলেও অভিযোগ করেন স্বজনরা।

নিহতের ছেলে আতিকুর রহমান লিটু বলেন, অধ্যাপক মঞ্জুরুল আলমের অধীনে আমার বাবার অপারেশন হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তার সহকারীরা বাবার অপারেশন করেছে।

নিহতের মেয়ে ফারজানা আক্তার বলেন, চিকিৎসক ডা. এ কে এম মনজুরুল আলম আমার পড়ালেখার খরচ এবং পড়ালেখা শেষ গ্রিন লাইফ হাসপাতালে আমাকে জব দিবেন এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর তার সহকারী জুয়েল অ্যাম্বুলেন্স খরচের জন্য ৫ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন। 

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসার অবহেলায় মোশাররফের মৃত্যু হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই তার অপারেশন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবি করে হাসপাতালে হট্টগোল করেন বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। এ সময় পরিবারকে দেয়া হাসপাতালের বিল ভাউচারে অসংগতি পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে রাত ৩টার দিকে মরদেহ নিয়ে যায় পরিবার।

কলাবাগান থানা পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের ম্যানেজমেন্টে সমস্যা আছে। সেটা হলো- টাকা দেয়ার পর রশিদ দেয়ার কথা কিন্তু সেটা না দিয়ে হাতে লিখা একটা রশিদ দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

উল্লেখ্য, গেলো ১৬ ডিসেম্বর আজিজুর রহমান (৫৮) নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা করা হয়। সেখানে ইমার্জেন্সির চিকিৎসক ডা. সজীব নজরুলকে এক নম্বর আসামি করে জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. আর আর কৈরি, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়। 

পরবর্তীতে অন্যদের নাম কেটে মামলার আসামি করা হয় কেবল ড. সজীব নজরুলকে। গেলো বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) তিনি জামিন চাইলে বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন