নিজ দলেই বিদ্রোহের মুখে জাস্টিন ট্রুডো!
বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে রাজনৈতিক সংকট। বেশ কয়েকজন শাসকের বিরুদ্ধে চলছে বিদ্রোহ আর বিক্ষোভ। সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতনের খবর শেষ হতে না হতেই ফ্রান্সে এমমানুয়েল মাক্রোঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ যেন থামছেই না। এই সবকিছুর মধ্যেই, কানাডার রাজনৈতিক দৃশ্যপটেও অস্বাভাবিক মোড় নিচ্ছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সময় ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় নেতা। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে ২০১৫ সালে তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর কথা বলার ধরণ ও সমাজসেবাসহ একাধিক উদ্যোগে কানাডার মানুষ তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। তবে, সময় বদলেছে, আর সেই জনপ্রিয়তাও এখন হ্রাস পেয়েছে।
সম্প্রতি, পদত্যাগ করেছেন ট্রুডোর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহকর্মী উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তিনি মনে করেন, ট্রুডো সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছে না। ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের খবরে রাজনৈতিক সংকট আরো জটিল হয়। ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টিও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান। তারা প্রশ্ন তুলছেন, "ট্রুডো কি এখন দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন?" অনেকেই চাইছেন, ট্রুডো পদত্যাগ করুক।
এদিকে, বিরোধী দল বিশেষ করে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (NDP)র নেতা জগমিৎ সিং, প্রথমবারের মতো সরাসরি ট্রুডোর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এখন সময় এসেছে, ট্রুডোকে চলে যেতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দেওয়া হোক, যাতে ট্রুডোকে পদত্যাগ করতে হয়।
এই পরিস্থিতি ট্রুডোর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ একদিকে বিরোধী দলের জনসমর্থন বাড়ছে অন্যদিকে নিজ দলেই বিদ্রোহ স্পষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, যদি এখন কানাডায় সাধারণ নির্বাচন হয়, তবে বিরোধী কনজারভেটিভরা বড় জয় পেতে পারে। গত কয়েক মাসে, ট্রুডোর দলের জনপ্রিয়তা কমেছে এবং তারা একাধিক নির্বাচনী আসনে হারও করেছে। এতে ট্রুডোর পদত্যাগের দাবি আরও শক্তিশালী হয়েছে।
সব সংকট সত্ত্বেও, জাস্টিন ট্রুডো একবারও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেননি। তিনি পরবর্তী নির্বাচনেও লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রুডো সরকারের সামনে একমাত্র বিকল্প হতে পারে পার্লামেন্ট স্থগিত করে কার্যক্রম বন্ধ রাখা। যাতে সরকার আরও কিছু সময় পায়। এর আগেও ২০২০ সালে একবার পার্লামেন্ট স্থগিত করা হয়েছিলো, কারণ দাতব্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তিগত দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছিলো।
তবে কানাডার সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের অক্টোবরের অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। হয়তো তখনি দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টিকে থাকবেন, না নতুন কোনো নেতা দেশ পরিচালনা করবেন। সেই নির্বাচনই হবে ট্রুডোর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
লেখক: অনন্যা চৈতী, গণমাধ্যম কর্মী