আজই পদত্যাগ করতে পারেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো
ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আজই (৬ জানুয়ারি) তাঁর পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে। জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টরোন্টোভিত্তিক কানাডিয়ান জাতীয় দৈনিক গ্লোব অ্যান্ড মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ট্রুডোর ঘনিষ্ট ওই সূত্রটি তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। নতুন নেতা বাছাইয়ের আগ পর্যন্ত জাস্টিন ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন কিনা সেবিষয়টি এখনো পরিস্কার নয়।
সূত্রটি গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে বলেছে, ট্রুডো কখন তাঁর পদত্যাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিতভাবে এখনো কিছু জানেন না। তবে সূত্রটি বলেছে, আসছে বুধবার লিবারেল পার্টির আইনপ্রণেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই এ ঘোষণা আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবারই(৬ জানুয়ারি) তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।
তবে ট্রুডো অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন, নাকি দলের একজন নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলেও সূত্রটি গ্লোব অ্যান্ড মেইলকে জানিয়েছেন। গেলো ৯ বছর ধরে লিবারেল পার্টির এই নেতা কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করলে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি স্থায়ী নেতৃত্বশূন্যতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। এমন সময় ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে, যখন বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, লিবারেলরা অক্টোবরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিরোধী কনজারভেটিভদের কাছে বাজেভাবে পরাজিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ালে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনের জোর দাবি উঠতে পারে যাতে এই সরকার আগামী চার বছর নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে মোকাবিলা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টি প্রথমবারের মতো হাউস আব কমন্সে তৃতীয় স্থানে নেমে যায়। কঠিন সমস্যা মোকাবিলা করে দলটির ভারমূর্তি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ওইসময় দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন জাস্টিন ট্রুডো।
একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, কানাডার বর্তমান অর্থমন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্কের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো আলোচনা করেছেন। তিনি অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক কি না। তবে লেব্ল্যাঙ্ক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করলে তাঁর পক্ষে এ দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হবে না।
জাস্টিন ট্রুডো ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং ২০১৮ ও ২০২১ সালে লিবারেল পার্টিকে জয়ী করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জাস্টিন ট্রুডোর ওপর পদত্যাগের চাপ ক্রমশ বাড়ছিল।
বর্তমানে, কানাডার পার্লামেন্টের হাউস অফ কমন্সে মোট ৩৩৮টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন রয়েছে লিবারেল পার্টির। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য লিবারেল পার্টির ১৭০টি আসনের প্রযোজন। তবে কয়েক মাস আগে ট্রুডোর সরকারের 'বন্ধু' খালিস্তানিপন্থী এমপি জগমিত সিংয়ের দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। তারপরই কানাডার রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরমে ওঠে ৷ জোট ভেঙে যাওয়ার কারণে ট্রুডোর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। গেলো ১ অক্টোবর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের পরীক্ষায়, ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি অন্য দলের সমর্থন পেয়ে যায় ৷ এর ফলে 'ফ্লোর টেস্টে' তখনকার মতো উতরে যান ট্রুডো। তবে চাপ এখনও কাটেনি ৷
গেলো ডিসেম্বরের পর থেকেই জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের আহ্বান জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অন্যতম অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করায় প্র্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েন জাস্টিন ট্রুডো। ট্রুডোর দেওয়া ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করার পর ফ্রিল্যান্ডের সঙ্গে মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
পরবর্তী সময়ে ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন ও একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে ট্রুডো দেশের জন্য ভালো কিছু করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ‘রাজনৈতিক ছলচাতুরী’র আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
এমআর//