মৃত্যুর মুখে ছিলেন জিনাত আমান, শেয়ার করলেন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই বলিউডে রীতিমতো কাজ করেছেন এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা জিনাত আমান। প্রবীণ এই অভিনেত্রী কাজ করেছেন একাধিক ডাকসাইটে অভিনেতাদের সঙ্গে।
বর্তমানে কয়েকটি পোষ্য নিয়ে একাই থাকেন তিনি বাড়িতে। আর এই একা থাকাই কাল হল অভিনেত্রীর। সোমবার(২০ জানুয়ারি) রাতে রীতিমতো একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হতে হলে তাঁকে।
জিনাত আমান ভাবতেই পারেননি এমনটা হবে। রোজই তো এমনটাই করেন। কিন্তু হুট করে যে এভাবে গণ্ডগোল হয়ে যাবে তা মনের এক কোণাতেও আসেনি অভিনেত্রীর।
কিন্তু যা ঘটল, তা চোখের সামনে নিয়ে আসল মৃত্যুর কালো অন্ধকারকে। প্রেসারের ওষুধ খেতে গিয়ে ঘোর বিপদে পড়ার পুরো ঘটনাটিকে ঠিক এভাবে বর্ণনা করছেন বলিউডের এক সময়কার অন্যতম এই বোল্ড অভিনেত্রী।
সোমবার নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডল ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে জিনাত আমান জানান, কীভাবে একটি ছোট্ট প্রেসারের ওষুধ খেতে গিয়ে রীতিমতো প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়েছিল তাঁর।
জিনাত লেখেন, গতরাতে আমার সঙ্গে যা হয়েছিল তা আপনাদের সকলের সঙ্গে শেয়ার করার অনুমতি দিন দয়া করে। সোমবার রাতে আন্ধেরি স্টুডিওয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি প্রজেক্ট-এর কাজ শেষ হয়েছিল। আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।
অভিনেত্রী লেখেন, বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল আমার। দীর্ঘদিনের ক্লান্তি থাকার কারণে শরীরে হয়ে উঠেছিল অবসন্ন।
ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমার শেষ কাজ ছিল ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়া। প্রতিদিনের মতো ওষুধ এবং জল নিয়ে মুখে দিতেই হঠাৎ করে ওষুধ গলায় আটকে যায়।
জিনাত আমান লেখেন, গলায় ওষুধ আটকে যাওয়ায় আমার রীতিমতো দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। ওষুধ যাতে গলা দিয়ে নেমে যায় তার জন্য আমি বারবার জল খেতে থাকি।
গোটা গ্লাসের জল খেয়ে ফেলার পরেও ওষুধ গলায় আটকে থাকে। আমার হঠাৎ করেই মনে হয় বাড়িতে কুকুর আর পাঁচটি বিড়াল ছাড়া আর কেউ নেই। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তখন আমার মনে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়।
জিনত আরও লেখেন, ডাক্তারের নাম্বারে ফোন করায় দেখলাম তিনি ব্যস্ত। অস্বস্তি বাড়তে থাকে শরীরে। তড়িঘড়ি ফোন করি জাহানকে। জাহান এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ায় তিনি বলেন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে।
ওষুধ নিজেই গলে গিয়ে গলা থেকে নেমে যাবে। এরপর বেশ কয়েক ঘন্টা আমি শুধু গরম জল পান করেছি। অবশেষে ওষুধ নেমে যায় গলা থেকে।
জিনাত আমান আরও লেখেন, গত রাতের ঘটনায় আমার একটা কথাই মনে হল, কিছু কিছু সময় ধৈর্য রাখা ভীষণ দরকার।
সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। এখন আমি একদম সুস্থ আছি। তবে গতরাতের কথা কোনওদিন ভুলব না।
অনেক দিন সিনেমার পর্দা থেকে দূরে আছেন জিনাত আমান। তবে টুকটাক বিজ্ঞাপন, রিয়ালিটি শোয়ে কাজ করছেন। একসময়কার বলিউডের সুন্দরী অভিনেত্রী ৭৯ বয়সেও নিজেকে ধরে রেখেছেন ম্যাজিকে।
ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ছবিও আপলোড করেন। নতুন প্রজন্মের চোখ টেনে নেন ফটোশুটে। সেই জিনাত আমানের এমন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পেরে দুশ্চিন্তায় অনুরাগীরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া জিনাত আমান কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। সেখান থেকে পথবদল করে চলে আসেন বিনোদন জগতে।
স্টাইল এবং ফ্যাশনের সংজ্ঞা তিনি নতুন করে লিখেছিলেন।‘জিনাত আমান’ নামটাই বলিউডের অভিধানে কেতাদুরস্তের সমার্থক।
জিনাত উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে পাড়ি জমান। সাউদার্ন ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ না করেই ভারতে ফিরে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন ‘ফেমিনা’ পত্রিকায়।
পরবর্তীতে সাংবাদিকতা থেকে চলে এলেন মডেলিংয়ে।মিস ইন্ডিয়া’ কনটেস্টে তৃতীয় স্থান পেলেন। ১৯৭০ সালে মিস এশিয়া প্যাসিফিক-এ বিজয়িনী জিনাত-ই।
জিনাত আমানের প্রথম ছবি হালচাল মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। একই বছর মুক্তি পায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘হাঙ্গামা’। তবে বক্স অফিসে ছবি দুটি মুখ থুবড়ে পড়ে। হতাশ জিনাত অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা পাল্টে দেন দেব আনন্দের একটা ফোনকল।
দেব আনন্দ জিনাত-কে ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন। ছবিতে আর ডি বর্মনের সুরে ‘দম মারো দম’ গানের সঙ্গে জিনাতের পারফরম্যান্স বলিউডের ইতিহাসে আইকনিক হয়ে যায়।
এই ছবির অসামান্য সাফল্যের পরে দেব আনন্দ-জিনাত জুটি বেশ কিছু ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। ‘হীরা পান্না’, ‘ইশক ইশক ইশক’, ‘প্রেম শাস্ত্র’, ‘ডার্লিং ডার্লিং’-এর মতো সফল ছবির নাম একে একে যোগ হয় তাঁদের যুগলবন্দির তালিকায়।
এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’। ছবিতে গিটার হাতে জিনাত এবং আশা ভোঁসলের কণ্ঠে ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিল কো’ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় রাজ কাপুরের ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’।ছবিতে স্বল্পবসনা জিনাতকে দেখে তীব্র সমালোচনা হয়। বিতর্কিত এই ছবির জন্য একইসঙ্গে নন্দিত ও নিন্দিত হন নায়িকা জিনাত আমান।
বলিউডে জিনাত-যুগ বজায় ছিল দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে। ‘হীরালাল পান্নালাল’, ‘চোর কে ঘর চোর’, ‘কুরবানি’, ‘দোস্তানা’, ‘ডন’-এর মতো ছবি তাঁর কেরিয়ার উল্লেখযোগ্য।
বলিউডে নায়িকাদের পরিচিত ইমেজ ভেঙে দিয়েছিলেন জিনাত। তিনি দেখিয়েছিলেন, পশ্চিমী পোশাকেও নায়িকা হওয়া যায়। নায়িকা মানেই শাড়িতে সুন্দর, এই মিথ চলে গিয়েছিলে তাঁর দৌলতে।
কিন্তু যাঁর আবেদনে পাগল হয়ে গিয়েছিল কয়েক প্রজন্মের দর্শক, তিনি নিজে কিন্তু দাম্পত্যে ছিলেন চরম অসুখী।
এমআর//