দেশজুড়ে

বখাটেদের লাঞ্চনা সহ্য করতে না পেরে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা

পটুয়াখালীর বাউফলে বখাটেদের লাঞ্চনা সহ্য করতে না পেরে সম্পা দাস (ইতি) ১৯ নামে এক কলেজ ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেনএ ঘটনায় ইতিকে হৃদয় রায়হান নামে বাউফল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হেনস্তা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত ইতি দাস উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের নিরঞ্জন দাসের মেয়ে।  সে বরিশাল  হাতেম আলী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের দাশপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বায়ান্ন টিভিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইতির বন্ধু, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঘুরতে বের হন ইতি দাস। দুপুর ১২টার দিকে এক বন্ধুকে নিয়ে উপজেলা সদরের পাবলিক মাঠ সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। এ সময় রেস্তোরাঁয় তাদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন হৃদয় রায়হান ও তার সঙ্গে থাকা পাঁচ-ছয় জন যুবক।

এ নিয়ে হৃদয়ের সঙ্গে ইতির বন্ধুর বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হৃদয় ওই তরুণীর বন্ধুকে ধরে রেস্তোরাঁর সামনে পাবলিক মাঠে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেইসঙ্গে সঙ্গে অন্য তরুণরা তার বন্ধুকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেন। ইতি বাধা দিতে গেলে তার সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়ান হৃদয় ও তার সহযোগীরা।

পরে ইতির বাবা-মাকে ফোন করে সেখানে আসতে বলেন হৃদয়। বিষয়টি দেখে আশপাশের লোকজন জড়ো হন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে গেলে ইতির এক বন্ধু ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান।

খবর পেয়ে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন এসে ইতির বন্ধুকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে থানায় নিয়ে যান। ইতিও থানায় যান। বিকাল ৪টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি ফিরে ইতি বাসার দোতলায় ওঠেন। এরপর আর নিচে নামেননি। পরিবারের কাউকে কিছু বলেননি। রাত ৯টার দিকে খাবার খেতে ইতিকে তার মা ডাকতে গিয়ে দেখেন ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করেন মা। প্রতিবেশীরা এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইতি দাসের চাচাতো ভাই বলেছেন, ‘নিজের সামনে বন্ধু ও তাকে হেনস্তা এবং পরিবারকে অপদস্থ হতে দেখে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ইতি।

নিহত ইতির বাবা নিরঞ্জন দাস জানান, একটি নম্বর থেকে ফোন করে তার মেয়েকে থানায় আটকে রাখার কথা জানানো হয়। পরে তিনি গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। এতে লজ্জায় ইতি নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দেন।

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. গোলাম মুস্তাহিদ জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার (ইতি) মৃত্যু হয়েছে। নিহতের  গলায় ফাঁসের চিহ্ন দেখা দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, হৃদয় বাউফল পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাকিবুজ্জামান রাকিবের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাকিবুজ্জামান রাকিব দাবি করেন, কিছু দিন আগে হৃদয় রায়হানকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হইয়েছেময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এখনো পযর্ন্ত  ইতির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাননি, অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন