লাইফস্টাইল

ঘুম থেকে ভোরে ওঠার নামে শরীরের দফারফা!

রাত যত গভীর হয়, ততই নিঃশব্দে ক্লান্তির আস্তরণ গাঢ় হতে থাকে। শরীর খোঁজে বিশ্রাম, মন চায় শান্তি। কিন্তু কেউ রাত জেগে স্বপ্ন বুনে, কেউ আবার ঘুমের হিসেব না মিলিয়েই ভোরের প্রথম আলোকে জড়িয়ে ধরতে চায়। অথচ জানেন কি, শরীরের স্বাভাবিক ছন্দে আচমকা আঘাত হানলে তার প্রতিক্রিয়া সুখকর নাও হতে পারে?

একদল বলেন, ভোরের নির্মল বাতাসে লুকিয়ে থাকে সজীবতার জাদু। আবার আরেকদল বলেন, অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে ধীরে ধীরে ক্লান্তির গভীর খাদে ঠেলে দেয়, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাহলে আসল সত্যটা কী? খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস কি সত্যিই শরীরের জন্য আশীর্বাদ, নাকি এতে লুকিয়ে আছে কিছু অব্যক্ত বিপদ?

অনেকের ধারণা, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেই দিনটি আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। 

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরাও বলেন, রাতের ঘুম তাড়াতাড়ি সেরে ভোর ৫টায় উঠে পড়লে শরীর চাঙ্গা থাকে। কিন্তু বিষয়টা কি আসলেই এত সরল? নাকি এর পেছনে আছে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক সতর্কতা, যা উপেক্ষা করলে শরীরের বারোটা বাজতে পারে?

গবেষণা বলছে, ভোরে ওঠা কেবল তখনই উপকারী, যদি পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা যায়। যদি রাতে দেরি করে ঘুমানো হয় এবং সকালে জোর করে ওঠার চেষ্টা করা হয়, তাহলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে এবং একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

অপর্যাপ্ত ঘুমের ক্ষতিকর দিক

ঘুমের অভাব শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

হজমের সমস্যা ও শারীরিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

সারাদিন কাজে অমনোযোগিতা ও একাগ্রতার অভাব তৈরি হয়।

ঘুমের রুটিন হঠাৎ বদলালে শরীরের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ বা দেহঘড়ি প্রভাবিত হয়।

 

স্নায়ু বিজ্ঞানী রাসেল ফস্টার বলছেন, ভোর ৫টা আর সকাল ৭টার মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই, যদি আপনি ৭-৮ ঘণ্টার নিরবচ্ছিন্ন ঘুম পান। কিন্তু যদি ঘুমের সময় কমিয়ে ফেলা হয়, তাহলে ‘স্লিপ ডিজঅর্ডার’ বা ঘুমজনিত সমস্যার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা হঠাৎ করে খুব ভোরে ওঠার চেষ্টা করেন, তাদের শরীরে এক ধরনের ধকল পড়ে। এতে হজমের সমস্যা, ক্লান্তি ও সারাদিনের কাজের দক্ষতা কমে যেতে পারে।

ভোরে ওঠার অভ্যাস করতে চাইলে তা ধাপে ধাপে করুন। হঠাৎ করে ঘুমের সময় বদলানো শরীরের জন্য ধাক্কার মতো হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে ভোরে ওঠার উপকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। শরীর ও মনকে অভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় দিন। এতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

ভোরে ওঠা ভালো, তবে সেটি হতে হবে পর্যাপ্ত ঘুমের পর। কেবলমাত্র ‘তাড়াতাড়ি উঠতে হবে’— এই মানসিক চাপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ঘুম ও ঘুমের গুণগত মান বজায় রাখাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ভালো ঘুম, সুস্থ শরীর, প্রাণবন্ত সকাল – এই তিনের সমন্বয়েই আসে প্রকৃত কর্মক্ষমতা ও সুস্থতা!

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন