ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের পাল্টাপাল্টি দাবি
ডাকাত সন্দেহে ‘গণপিটুনিতে’ ২ জন নিহত, গুলিবিদ্ধ ৪
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছনখোলা এলাকায় ‘ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে’ দুইজন নিহত হয়েছেন। ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করার পর গণপিটুনিতে তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় পাল্টা গুলিতে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার এঁওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নিহত একজনের নাম নেজাম বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অন্যজনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। নিহত দু’জনই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- মো.ওবায়দুল্লাহ (২২), মো.নাসির(৩৮), মো.আব্বাস(৩৮) ও মো. মামুন সওদাগর (৪৮)।
চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন,‘এলাকায় ডাকাত পড়েছে সন্দেহে গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ফেলে। পরে পিটুনিতে দুজন নিহত হন। নিহত একজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা।’
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এলাকায় এক দল ডাকাত এলে গ্রামবাসী টের পেয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে দুজনকে পিটুনি দেন তারা। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম গণাধ্যমকে বলেন, ‘ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন। এর আগে গ্রামবাসীর ধাওয়ায় পালানোর সময় তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গুলিতে আহত হয়েছেন চার গ্রামবাসী। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত একজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল এবং ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া একটি সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করছি, অটোরিকশায় করে ডাকাতরা এসেছেন। হতাহতদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।’
ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের কয়েকজন বলছেন, কাঞ্চনার নেজাম নামের এক রাজনৈতিক কর্মী গত ৫ আগস্টের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরেন। ফিরেই তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি শুরু করেন। নেজাম গ্রুপের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। সোমবার নেজাম আরো কয়েকজন নিয়ে ছনখোলা এলাকায় গেলে তারাবী নামাজ পরে বের হওয়া মুসল্লিরা নেজাম গ্রুপকে ঘিরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় এলাকায় ডাকাত পড়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নেজাম একালাবাসীর ওপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী নেজাম ও তাঁর সাথে থাকাদের গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নেজাম ও ছালেক নামে দুজন মারা যায়।
স্থানীয়দের আরেকটি অংশের দাবি এটি গণপিটুনি নয়, বরং শতভাগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও পরিকল্পনা অনুযায়ি হত্যাকাণ্ড। নজরুল ইসলাম মানিক নামে স্থানীয় অওয়ামী লীগের এক নেতা পরিকল্পনা অনুযায়ি মসজিদের মাইকে ডাকাত বলে গুজব ছড়িয়ে লোকজন জড়ো করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
এমআর//