সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দুদকের দুর্নীতি তদন্ত শুরু

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২৩ মার্চ ) দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনুসন্ধানের বিষয়টি জানিয়েছন।
১৩ মার্চ দুদক মোহাম্মদ আলী মিয়া ও তার দুর্নীতিতে সহায়তাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাজিদ-উর-রোমানকে।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ আলী মিয়া সিআইডিতে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সংস্থাটিকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। তিনি মামলা গ্রহণ, তদন্ত ও নিষ্পত্তি পর্যন্ত সবকিছুই নিজের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলারও সুযোগ পেত না।
সরকার ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সিআইডি প্রধান থাকাকালীন তিনি কোনো নিয়মনীতি মানতেন না এবং সরকারের ‘প্রেসক্রিপ্টেড’ আদেশ পালন করতে পিছপা হননি। বিশেষ করে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ‘অপছন্দনীয়’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, মানিকগঞ্জ ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছিল।
মানিকগঞ্জ ও হবিগঞ্জের এসপি থাকাকালীন কনস্টেবল নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। তবে তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সিআইডিতে দায়িত্ব পালনকালে মোহাম্মদ আলী মিয়া সরকারি তহবিল লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন। তার সিন্ডিকেট সিআইডির বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে এককভাবে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ দেখালেও, বাস্তবে তাদের একাধিকজনকে মিলে একটি গাড়ি ব্যবহার করতে হতো। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হতো।
মোহাম্মদ আলী মিয়া দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার নামে ও বেনামে ঢাকার বাড্ডা, মিরপুর, পূর্বাচল এবং কেরানীগঞ্জে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া, তিনি যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার করেছেন বলে জানা গেছে। লন্ডনে অবস্থানরত তার ছেলে আফনান লাবিব একটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করেন, যেখানে মোহাম্মদ আলী মিয়া অংশীদার।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে সিআইডির প্রধান থাকাকালে মোহাম্মদ আলী মিয়া নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডির কয়েকজন কর্মকর্তা এতে আপত্তি জানালে তিনি দাবি করেন যে এটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট তিনি সিআইডি কার্যালয়ে গিয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্তের নথিপত্র সরিয়ে নেন।
দুদক বর্তমানে মোহাম্মদ আলী মিয়া ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
এসি//