মিঠুনের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি! বিয়ের চারমাস পরই প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ
হিন্দি চলচ্চিত্র আজ শুধু ভারতে আটকে নেই। সীমানা পেরিয়ে বলিউড চলচ্চিত্রের কদর আজ দুনিয়া জুড়ে। হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বা আন্তর্জাতিক সুপারস্টার কে?-তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে।
রাজ কাপুরকেই হিন্দি চলচ্চিত্রের ‘বিশ্বব্যাপী সুপারস্টার’। হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। অনেকে আবার বলিউডের ‘শাহেনশাহ’ অমিতাভ বচ্চন কিংবা ‘বলিউড বাদশাহ’ শাহরুখ খানের নাম বলেন।
তবে যদি প্রশ্ন করা হয়-এমন কোন তারকা অভিনেতা আছেন যার আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা সকল যুগকে ছাড়িয়ে গেছেন? এমন প্রশ্নের জবাব একটাই-'ডিস্কো ড্যান্সার' মিঠুন চক্রবর্তী।
আশির দশকে ইউরোপে বিশেষ করে ইউরেশিয়ায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলাদের মধ্যে অসম্ভব তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সেও বিশ্বজুড়ে তার বৃদ্ধ এবং তরুণ উভয় শ্রেণির বিশাল ভক্ত-অনুরাগী রয়েছে।
‘ডিস্কো ড্যান্সার’খ্যাত এই নায়ক দু’বার বিয়ে করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে মিঠুন তখনকার অন্যতম সেরা সুন্দরী অভিনেত্রী হেলেনা লুককে বিয়ে করেন।
তবে সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার মাস। একই বছর ক্ষণজন্মা কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমারের সাবেক স্ত্রী অভিনেত্রী যোগিতা বালির গলায় বিয়ের মালা পরান।
যোগিতা বালিকে বিয়ে করার পরও আশির দশকে অভিনেত্রী শ্রীবেদীর সাথেও প্রেমের সম্পর্ক ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। বিবাহিত জানা সত্ত্বেও শ্রীদেবী চেয়েছিলেন মিঠুনকেই বিয়ে করতে। নায়কের জীবনে দ্বিতীয় নারী হয়ে থাকার কোনো ইচ্ছে তার ছিল না।
তাই একদিন সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেন। তবে তারা যতদিন একসঙ্গে ছিলেন একে অপরকে নাকি চোখে হারাতেন। যদিও শ্রীদেবীকে নিয়ে কোনো দিনই একটি শব্দও খরচ করেননি মিঠুন। প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন অভিনেতা।
মহাতারকা মিঠুন চক্রবর্তীর প্রথম স্ত্রী কে এই হেলেনা লিউক? ১৯৭০ দশকের শেষ দিকে বলিউডে নিজের জায়গা করে নিতে চাইছিলেন এই মডেল-অভিনেত্রী। কিন্তু কেন এত অল্প সময় টিকেছিল হেলেনা-মিঠুনের দাম্পত্য জীবন? কেনই বা তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়!
বলিপাড়ার গুঞ্জন, হেলেনা লুকের সঙ্গে বিয়ের আগে মিঠুনের ‘জমজমাট প্রেম’ চলছিল অভিনেত্রী সারিকার(দক্ষিনী অভিনেত্রী শ্রুতি হাসানের মা) সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রেমে ধাক্কা খেয়ে নাকি শূন্যতাবোধে ভুগতে থাকেন মিঠুন। সেই সময় হেলেনার সঙ্গে তাঁর পরিচয়, প্রেম এবং পরিণয় এবং চারমাস পর ছাড়াছাড়ি।
বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজারসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, জাভেদ খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণেই নাকি মিঠুন চক্রবর্তীর দিকে ঝুঁকেছিলেন হেলেনা লুক।
অভিনেতা-মডেল জাভেদ খানের সঙ্গে কলেজ জীবন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল হেলেনার। চার বছর প্রেমপর্ব চলার পরে হঠাৎই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। এই বিচ্ছেদের মুহূর্তেই নাকি মিঠুনের প্রবেশ এবং হেলেনার সঙ্গে বিয়ে।
পরবর্তীতে হেলেনার জীবনে আবার ফিরে আসেন জাভেদ খান। হেলেনাও জাভেদের প্রতি নরম হয়ে পড়েন। ফলে মিঠুন-হেলেনার দাম্পত্যে ছেদ আসে। তবে জাভেদ খানের সঙ্গে হেলেনার প্রেমও পরিণতি পায়নি। পরবর্তীতে উদীয়মান অভিনেতা বিজয়েন্দ্র ঘটগের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা শোনা যায়। সেই সম্পর্কও বেশিদিন টিকেনি হেলেনা লুকের।
কেন টিকেনি সংসার তা নিয়ে বহু বছর আগে স্টারডাস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন হেলেনা লুক। বলেছিলেন, ‘আমার ওই চার মাস বয়সী বিয়ে এখন আমার কাছে ঝাপসা স্বপ্নের মতো। আমার খালি মনে হয় ওটা না হলেই ভালো হতো। উনি আমার মগজধোলাই করেছিলেন একপ্রকার, আমাকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে তিনিই আমার জন্য একমাত্র যোগ্য পুরুষ। দুর্ভাগ্যবশত, উনি সফল হয়েছিলেন।’
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আমিই ওঁর(মিঠুন) থেকে সরে আসি এবং ডিভোর্স চাই। উনি এখন তারকা হতেই পারেন, কিন্তু তাতে আমার সিদ্ধান্ত বদলায় না। উনি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও হন তাহলেও ওঁর কাছে আমি ফিরে যাবো না। আমি খোরপোশেরও দাবি করিনি কখনও। ওটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল যা কেটে গিয়েছে।’
তুর্কি বাবা আর অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান খ্রিস্টান মায়ের সন্তান হেলেনা লুক প্রথমে মডেলিং ও পরে অভিনয় জগতে আসেন। তাতিনেনি রামা রাও পরিচালিত জুদাই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে প্রবেশ করেন হেলেনা লুক। ওই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন জিতেন্দ্র ও রেখা। সিনেমাটি সুপার-ডুপার হিট হলেও হেলেনার উপস্থিতি তেমন নজর কাড়েনি। পরে ‘সাথ সাথ’ (১৯৮২) ছবিতেও একটি ছোট চরিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছিল।
এ ছাড়া কাছাকাছি সময়ে ‘আও পেয়ার কারেন (১৯৮৩), ‘দো গুলাব’ (১৯৮৩) এবং ‘ভাই আখির ভাই হোতা হ্যায়’ (১৯৮২) নামে ৩টি ছবিতে হেলেনা অভিনয় করেছিলেন। পরবর্তীতে ‘মেরে সাথ চল’(১৯৮৪) এবং পরের বছর অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ব্লকবাস্টার হিট হওয়া ‘মর্দ’ সিনেমায়ও অভিনয় করেন।
বলিউডে হেলেনাকে শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৮ সালের ‘এক নয়া রিস্তা’ ছবিতে রুবি চরিত্রে। বিনোদ পান্ডে পরিচালিত এবং রেখা-রাজ কিরণ অভিনীত সেই ছবিতেও হেলেনা নজর কাড়তে পারেননি
ফিল্মে অভিনয়ের আগে হেলেনা ৯ বছর গুজরাতি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। গুজরাতি ছবিতে ভাল রোল পাননি বলেই নাকি বলিউডে ভাগ্যান্বেষণে আসেন তিনি। জানা যায়, তিনি গুজরাতি ভাষা লিখতে, পড়তে এবং বলতেও শিখেছিলেন।
বলিউডে কেরিয়ার জমাতে না পেরে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও থিতু হতে না পেরে হেলেনা আমেরিকা চলে যান। নিউ ইয়র্কে বসবাস শুরু করেন হেলেনা। যুক্তরাষ্ট্রের ডেল্টা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন তিনি।
সেই চাকরিই তিনি করে যান। গ্ল্যামারের দুনিয়ায় আর তাঁকে দেখা যায়নি। গেলো ৩ নভেম্বর পরপারে পাড়ি দেন মিঠুন চক্রবর্তীর প্রথম স্ত্রী হেলেনা লুক।
এমআর//