অর্থনীতি

ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদ দখলে মরিয়া উত্তরা গ্রুপের মতিউর রহমান

উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও উত্তরা ফাইন্যান্সসহ একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারির হোতা মতিউর রহমান, এবার ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদ দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের কট্টর সমর্থক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ঘনিষ্ঠ এই সহচর ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেয়ার জন্য নানারকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

সম্প্রতি ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন,  আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের হোতা মতিউর রহমানের লোকজন ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া শুরু করেছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানারকম হুমকি দিচ্ছেন।

জানা যায়, মতিউর রহমানকে আমানতের টাকা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা না করে নিজের মতো ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিলো এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির একাধিক পরিচালকের যোগসাজশে তার বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন, অনুমোদন ছাড়া পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ, নিয়ম ভেঙে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ ওঠে।  আওয়ামী লীগ সরকার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ছত্রছায়ায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির বরপুত্র।

আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আদালত মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে মতিউর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই আদেশ দেন

সূত্র জানিয়েছে,  শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালেও মতিউর রহমান আওয়ামী সরকারের প্রতি তার আনুগত্য বজায় রেখেছিলেনআন্দোলন শুরু হওয়ার পর গত বছর ১২ জুন বিকেলে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন্স ইনভেস্টার্স অ্যাসোসিয়েসন (বেজিয়া)-এর সাতজন সদস্য সমন্বিত একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে মতিউর রহমান সাবেক অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি  শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানান এবং সবধরনের সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ।

ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরা ফাইন্যান্স ও উত্তরা অটোমোবাইলসের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বীমা কোম্পানিটির ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭১ শেয়ারের মালিক এবং তার ছোট ভাই উত্তরা ফাইন্যান্সের সাবেক পরিচালক মুজিবুর রহমানের শেয়ারসংখ্যা ২২ লাখ। হিসাব অনুসারে মতিউর রহমান ও মুজিবুর রহমান এ দুই ভাইয়ের মোট শেয়ারসংখ্যা ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭১টি, যা ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বীমা আইন অনুযায়ি, নিজের পরিবারে পরিচালকসংখ্যা ২, কিন্তু ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ পাঁচ শতাংশের কম হলে তারা বীমা কোম্পানির পরিচালক পদ ধারণের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা ২০১৩-এর ফরম বীউনিক-খতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যক্তি ও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান মিলে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মতিউর রহমানদের সর্বমোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ দুই কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার ৫৮০টি, যা বীমা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ২৩ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।

বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা ২০১৩-এর ফরম বীউনিক-খ অনুসারে, আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়েছেন অথবা প্রতারণামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত, অর্থনৈতিক অপরাধ ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবীমা কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালক পদের জন্য নির্বাচিত বা মনোনয়ন বা পদধারণের অযোগ্য। 

মতিউর রহমানের অপতৎপরতা ও তার সম্পর্কে নানা অভিযোগ জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ  সূত্র জানিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

আই/এ

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন