আজ পহেলা বৈশাখ, শুভ নববর্ষ; বাঙালি চেতনার সোপান

আজ পহেলা বা পয়লা বৈশাখ। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিন। একইসঙ্গে বঙ্গাব্দেরও প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে।পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত।
বরাবরের মতো এবারেও নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নতুন বছর। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, দিনটিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত সর্বস্তরের মানুষ।
এবার ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ইউনেস্কো স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখা হয়েছে। আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের হবে।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এবারের প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এবারের শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন শিল্পী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া যোগ দেবেন দ্ইু শতাধিক ব্যান্ড শিল্পী। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে পরিবেশন করা হবে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ গানটি। এ সময় গোটা পৃথিবীর শান্তিও কামনা করা হবে।
এবার এ শোভাযাত্রায় প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় এবং ফিলিস্তিনে বিরাজমান বর্বরতাকে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একাত্মতা উদ্যাপিত হবে, যা এখন দেশব্যাপী একটি পরিচিত সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিণত হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে গান, নৃত্য, আবৃত্তি, ও নাটকের আসর। সারা দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বসেছে বৈশাখী মেলা। গ্রামীণ খেলাধুলা, হস্তশিল্পের পসরা, পিঠাপুলি ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের দোকানে জমে উঠেছে উৎসবের বাজার। সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আয়োজন, জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। শেরাটন ঢাকাসহ রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতেও থাকছে আবহমান বাংলা নিয়ে দারুণ সব আয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মতো দেশের সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে আজ সর্বজনীন লোকউৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপন করছে।বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এই অভ্যুত্থান বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, শান্তিময় ও আনন্দপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের প্রেরণা দেয়। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এই বাংলা নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার। আসুন, আমরা বিগত বছরের গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি।
এছাড়া বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, জাতির আত্মপরিচয়ে পহেলা বৈশাখ এক উজ্জ্বল উপাদান। বাংলাদেশি জাতিসত্তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নববর্ষ উদযাপন। বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশিদের হৃদয়ে তার প্রকাশ অনন্য ভিন্নরূপ। আমি এই উৎসবমুখর দিনে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা ও বিভাজন দূর হবে। রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ফ্যাসিস্টদের পতনের পর এবারের পহেলা বৈশাখ স্বস্তির বাতাবরণে উদযাপিত হবে। তাই আমি বিশ্বাস করি, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা ও বিভাজন দূর করে পহেলা বৈশাখের উৎসব ভরে উঠবে পারস্পরিক শুভেচ্ছায়।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার প্রথমবারের মতো ১৪৩২ সালের বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারোসহ অন্য নৃ-গোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এমআর//