দেশজুড়ে

নববর্ষে ঢাকায় বর্ণিল উৎসবের ঝলক: শিল্প আর প্রতিবাদের অনন্য সংমিশ্রণ

পয়লা বৈশাখে যেন পুরো রাজধানীই রূপ নিয়েছে এক সুবর্ণ উৎসবভূমিতে। ভোরের রমনা থেকে রাতের সংসদ ভবন- প্রতিটি আয়োজনই যেন বাঙালিয়ানার জয়গান। হাজার বছরের ঐতিহ্য, প্রতিবাদের প্রতীক, শহিদের স্মরণ ও সমতল-পাহাড়ের সংস্কৃতির এক অনন্য মিশেল ঘটেছে এবারের বৈশাখের মহাউৎসবে।

রমনা বটমূল: বৈশাখের সূর্যোদয় ছায়ানটের গানে

বরাবরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে, সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে, ছায়ানটের আয়োজনে রমনার বটমূলে শুরু হয় নববর্ষ বরণ। গান, কবিতা, আবৃত্তি আর বাঙালি খাবারের মেলায় মুখর থাকে চারপাশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: চারুকলার শোভাযাত্রায় উৎসবের ঢেউ

চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। রঙিন মুখোশ, বিশাল পাপেট আর শিল্পমণ্ডিত ভাস্কর্যে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। মূল আকর্ষণ ছিল ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’ ও ‘পানি লাগবে পানি’ থিম- যেখানে প্রতিবাদ আর স্মরণ গেঁথে যায় শৈল্পিক ভাষায়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: ব্যান্ডসংগীতে বৈশাখী ঝড়

বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে বৈশাখী কনসার্ট। ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, লালন, ভাইকিংসসহ দেশি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ডরা মাতায় মঞ্চ। গারো, চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা ও খাসিয়া ব্যান্ডগুলো পরিবেশন করবে নিজস্ব সংস্কৃতি।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি: নবপ্রাণের সাংস্কৃতিক উৎসব

১৩ ও ১৪ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী শিল্পকলায় ‘নবপ্রাণ আন্দোলন’-এর আয়োজনে গান, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি ও প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পীরা।

রবীন্দ্র সরোবর: সুরের ধারার বৈচিত্র্যময় আয়োজন

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারা আয়োজন করে মুক্তমঞ্চের বৈশাখী উৎসব। সমতল ও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে গান, কবিতা ও নাচের মাধ্যমে বরণ করা হয় নতুন বছরকে।

জাতীয় সংসদ ভবন: প্রযুক্তি আর সংস্কৃতির মোহময় সন্ধ্যা

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয় চীনা প্রযুক্তি দলের অংশগ্রহণে ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো। সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় বৈশাখী ব্যান্ড শো ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শোভাযাত্রার বিশেষ থিম: প্রতিবাদ, স্মরণ ও সংহতির বার্তা

এবারের শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ ছিল ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’। যদিও এটি একবার আগুনে পুড়ে যায়, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ককশিট দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। একইসঙ্গে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত মীর মুগ্ধের স্মরণে নির্মিত হয় ১৫ ফুট লম্বা পানির বোতল, যার ভেতরে ছিল একাধিক খালি বোতল- শহিদদের প্রতীক।

এছাড়া বড় আকৃতির ইলিশ মাছ, কাঠের বাঘ, শান্তির পায়রা, ঘোড়া, পালকি, সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, পটচিত্রসহ নানান ভাস্কর্যও ছিল চোখধাঁধানো।

বিশেষভাবে নজর কাড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রতীক ‘তরমুজের ফালি’ মোটিফ। আয়োজকরা জানান, এটি ফিলিস্তিনের পতাকার রঙের প্রতিফলন- প্রতিবাদ ও অধ্যবসায়ের প্রতীক হিসেবে এটি স্থান পেয়েছে শোভাযাত্রায়।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন