লাইফস্টাইল

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে শিশুদেরও, সুস্থ রাখতে যা করবেন

ছবি: সংগৃহীত

গরমের তীব্রতা যখন বাড়ে তখন শুধু বড়রাই নয় , শিশুদেরও বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি মাথাচাড়া দেয়।  বিশেষত গরমের তাপমাত্রা যদি হঠাৎ করে বাড়তে থাকে , তবে ছোটদের জন্য এই সময়টা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।  গরমের ছুটি যদিও এখনও শুরু হয়নি তবুও সেদিনের অপেক্ষায় না থেকে এখনই শিশুকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।  তাই অভিভাবকদের উচিত কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা , যা তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও গরমের এই তাপদাহ থেকে তাদের সুরক্ষা রাখবে।   

শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি 

গরমের দিনে পানিশূন্যতা শিশুদের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।  অনেক সময় দেখা যায় , শিশুরা সঠিকভাবে পানি খায় না , বিশেষ করে স্কুলে থাকলে।  এ কারণে তাদের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।  যা বমি, পেটের সমস্যা, জ্বর ইত্যাদির কারণ হতে পারে।  শিশুদের শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি এমন কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে , যা পরবর্তী সময়ে সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

চিকিৎসকরা বলেন , গরমের সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - শিশুকে নিয়মিত পানি খাওয়ানো।  খাওয়ার মাঝে ফলের রস এবং শরবতও তাদের জন্য উপকারী।  গরমে লেবুর রস, তরমুজের শরবত কিংবা আনারসের শরবত শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করবে।  পাশাপাশি ওআরএস (অরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন) সব সময় কাছে রাখতে হবে।  রোদ থেকে ফিরে যদি শিশুর অস্বস্তি অনুভূত হয় বা বমি হয় , তাহলে দ্রুত ওআরএস মিশিয়ে পানি খাওয়ান।

হিট স্ট্রোক

গরমের সময়ে শিশুর শরীর অতিরিক্ত তাপে ঝুঁকির মধ্যে থাকে এবং হিট স্ট্রোকের মতো বিপদও তৈরি হতে পারে।  হিট স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ যেমন - শিশুর ত্বক শুকিয়ে যাওয়া , ঘাম না হওয়া , মাথা ঘোরা , বারবার বমি করা , শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হওয়া ইত্যাদি।  এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান ।  কারণ হিট স্ট্রোক শিশুর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।  অনেক সময়ে হিট স্ট্রোকের ফলে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।

জীবাণু সংক্রমণ

গরমের সময়ে ছোটদের মধ্যে জীবাণু সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে , যা সর্দি-কাশি , জ্বর , অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া থেকেও হতে পারে।  শিশু যদি জ্বরে আক্রান্ত হয় তবে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খাওয়ানো উচিত।  তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।  পরিচ্ছন্নতার উপর নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ ।  কারণ যেকোনো ধরনের জীবাণু সহজেই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে যে যে পদক্ষেপ নেবেন

বাইরে বেরোনো সীমিত করুন :

গরমের সময়ে, বিশেষত দুপুরে বাইরে বেরোনো এড়িয়ে চলুন।  তবে একান্তই বেরোতেই হলে , কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই নিন।  শিশুর মাথায় পাতলা সুতির স্কার্ফ অথবা টুপি পরিয়ে দিন , এবং সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।  স্কুল থেকে ফেরার পর শিশুকে এক গরম গোসলা করিয়ে নিন , যাতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন :

গরমে বাইরের খাবার , ভাজাভুজি , জাঙ্ক ফুড ও রাস্তার খাবার শিশুকে খাওয়ানো উচিত নয়।  এসব খাবারে অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর উপাদান ও জীবাণু থাকতে পারে।  বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবারই সবচেয়ে ভালো।  ভাত , পাতলা ডাল , মাছের ঝোল , শাকসবজি এগুলো শিশুর জন্য পুষ্টিকর।

স্বাস্থ্যকর পানীয়-খাবার :

পানীয়খাবারে বেশি প্রোটিন না দিয়ে দই-চিঁড়ে বা দইয়ের ঘোল দিয়ে তৈরি ওটস দিতে পারেন।  ওটসে থাকা বিটা-গ্লুকান হার্টের জন্য উপকারী এবং পেটও ঠান্ডা রাখে।  এছাড়া সারা রাত ভিজিয়ে রাখা মেথির পানি বা মৌরি-মিছরি ভেজানো পানি খাওয়ানো যেতে পারে, যা শিশুর পেট ঠান্ডা রাখবে এবং গরমের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করবে।

গরমে শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য অভিভাবকদের সতর্কতা ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, বাইরে বেরোনোর সময় সুরক্ষা নেয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সবকিছু মিলিয়ে গরমের তাপদাহের মধ্যে শিশুকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।  তাই শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকরা যদি প্রতিদিন কিছু সহজ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেন , তবে গরমের এই কঠিন সময়েও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

এসকে//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন