উত্তপ্ত সংঘাতের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানের সরাসরি যোগাযোগ

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলায় যখন দুই চিরবৈরী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা (এনএসএ) সরাসরি যোগাযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (০৮ মে) পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম সামা নিউজ’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার নিশ্চিত করেছেন, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক এবং ভারতের এনএসএ অজিত ডোভালের মধ্যে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতের দুই এনএসএ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’ তবে আলোচনার বিস্তারিত বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই যোগাযোগের পেছনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক চাপে বড় ভূমিকা রয়েছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এনএসএ মার্কো রুবিও দুই দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গেলো ৬ মে গভীর রাতে, যখন ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান তাৎক্ষণিক ও সুসমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানায়। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ফ্রেঞ্চ নির্মিত ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশনের ‘রাফালে’ যুদ্ধবিমান।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাইলে ১০টি ভারতীয় ফাইটার জেট গুলি করে নামাতে পারতাম, কিন্তু আমরা সংযম দেখিয়েছি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা প্রাথমিকভাবে তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের খবর দিয়েছিল, যা পরে সরিয়ে ফেলা হয়। সিএনএনের সঙ্গে কথা বলার সময় এক মার্কিন বিশ্লেষক বলেন, যদি সত্যিই রাফালে যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়ে থাকে, তবে সেটি ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
বিশেষজ্ঞরা এই সংঘর্ষকে চীনা ও পশ্চিমা প্রযুক্তির মুখোমুখি সংঘর্ষ হিসেবে দেখছেন। পাকিস্তান সম্প্রতি চীনা প্রযুক্তির জে-১০সি যুদ্ধবিমান যুক্ত করেছে, যা ভারতের রাফালের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এই প্রথমবারের মতো কোনো রাফালে যুদ্ধক্ষেত্রে ভূপাতিত হলো।
এক মার্কিন বিশ্লেষকের ভাষায়, ‘এটি বড় ধরনের অগ্রগতি এবং চীনা প্রযুক্তির বিশ্বমানের হয়ে ওঠার প্রমাণ।’
২০১৯ সালের বালাকোট হামলার সময় পাকিস্তান প্রতিক্রিয়ায় একদিন দেরি করেছিল। কিন্তু এবার দেশটির প্রতিক্রিয়া ছিল মুহূর্তের মধ্যে—যেখানে সরকার ও সেনাবাহিনী আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ভারত আঘাত হানলে প্রতিশোধ হবে ‘কুইড প্রো কো প্লাস’ নীতিতে, অর্থাৎ সমানতালে নয় বরং অতিরিক্তভাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের এনএসএদের সরাসরি সংলাপ এবং রাফালে ভূপাতিতের দাবি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে, চীনা সামরিক প্রযুক্তির উত্থান এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য নতুনভাবে সাজানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসি//