ভারতের ২৪টি বিমানবন্দর বন্ধ
ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ভারতকে জবাব দিলো পাকিস্তান

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু ও উদহামপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটে সেনাবাহিনীর তিনটি অবস্থান লক্ষ্য করে পাকিস্তান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে ভারত। তবে নয়াদিল্লি বলছে, ইসলামাবাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের সশস্ত্র বাহিনী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই এলাকা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ভারতের একাধিক প্রতিরক্ষাসূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে ছোড়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিশানায় আঘাত হানার আগেই মাঝ আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মুর সাতওয়ারি, সাম্বা, আরএস পুরা ও আরনিয়ার দিকে ছোড়া হয়েছিল। আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে সেগুলো মাঝ আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে।
তবে ভারতে হামলার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা ভারতের জম্মুতে হামলার বিষয়টি ‘ভুয়া ও মিথ্যা’। পাকিস্তানের কয়েকটি নিরাপত্তাসূত্র এই দাবি করেছে।
হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, পাকিস্তান যখন হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেবে, তখন সারা বিশ্ব তা জানবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতেও হামলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে চলমান বেপরোয়া অপপ্রচারের অংশ।
এদিকে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংববাদমাধ্যম পিটিভি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছে। এতে নিরাপত্তাসূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কাশ্মীরে হামলার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও মিথ্যা।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই ভুয়া খবর ছড়ানোর উদ্দেশ্য হলো এই ভ্রান্ত ও ব্যর্থ ধারণা তৈরি করা যে পাকিস্তানও ভারতের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াদিল্লি দাবি করে, বুধবার দিবাগত রাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ভারতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। তারা আরও দাবি করে, তাদের হামলায় লাহোরে পাকিস্তানের একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।
ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে পাকিস্তানে ২৯টি (আগে বলা হয়েছিল ২৫টি) ড্রোন পাঠিয়েছিল ভারত, যার সবগুলোই ধ্বংস করা হয়েছে।
ভারতের ২৪টি বিমানবন্দর বন্ধ: এদিকে, ভারতের হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, গুজরাট এবং রাজস্থানের ২৪টি বিমানবন্দর বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার প্রথম প্রহরে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা ব্যুরো (বিসিএএস) দেশটির সকল বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল বিমানবন্দরে সকল যাত্রীর জন্য সেকেন্ডারি ল্যাডার পয়েন্ট চেকিং (এসএলপিসি) করা হবে। টার্মিনাল ভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গেলো মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার পর পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান। এরপর থেকে কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মঙ্গলবার রাতের হামলায় নারী-শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৭ জন আহত হন। অন্যদিকে, সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩জন আহত হয়েছেন বলে দাবি ভারতীয় সেনাবাহিনীর।
এমআর//