কারা এই সোফিয়া কুরেশি ও ব্যোমিকা সিং?

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। ওই হামলায় ২৬ জনের নিহতের বদলা নিতে গ্যালো বুধবার পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এসব হামলায় অংশ নেয় ভারতের প্রায় ৮০টি যুদ্ধবিমান। এই হামলায় পাকিস্তানকে জবাব দিচ্ছেন ভারতের দুই নারী কর্মকর্তা।
গেলো বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার পর ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি খোঁজ হয়েছে যে নারীর, তিনি কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারতের সরকারি ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর যে দুই নারী অংশ নেন, সোফিয়া কুরেশি তাঁদের একজন। অন্যজন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং।
কীভাবে কখন পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’র ঘাঁটি ভারতীয় বাহিনী গুঁড়িয়ে দেয়, সোফিয়া ও ব্যোমিকা তার বিবরণ দেন। সেই থেকে সৃষ্টি কৌতূহলের। এই দুই নারীর পরিচয় জানতে আগ্রহ দেখা যায় সর্বত্র।
কারা এই ব্যোমিকা সিং আর সোফিয়া কুরেশি? যাদের নেতৃত্ব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত হলো পাকিস্তান। ব্যোমিকা নামের অর্থ আকাশকন্যা। আকাশকন্যা যে মহাশূন্য–বিহারী হবেন তাতে আশ্চর্য কী?ছোট থেকে সেই স্বপ্নই দেখে এসেছেন ব্যোমিকা। স্বপ্ন সার্থকও হয়েছে। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে প্রকৌশলে স্নাতক হয়ে যোগ দেন ভারতীয় বিমানবাহিনীতে। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে উইং কমান্ডার হন। আর এখন পাকিস্তানে হামলার জবাব দিচ্ছেন।
ব্যোমিকার সঙ্গে অপারেশনে কাজ করেছেন আরেক মুসলিম নারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এবারই প্রথমবার দেশটির কোনো বড় সামরিক অভিযানের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোনো নারী সেনা অফিসার।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তাদের দৃঢ় বক্তব্য কেবল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ়প্রতিজ্ঞতাই নয়, বরং সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রতিফলনেরই প্রকাশ।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘কোর অব সিগন্যালস’-এর একজন দক্ষ ও সম্মানিত কর্মকর্তা। তিনি ভারতের প্রথম নারী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় একটি ভারতীয় সেনা দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
২০১৬ সালে তিনি ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’ নামে ভারতের আয়োজিত বৃহত্তম সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দেন, যেখানে ১৮টি দেশের সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে কুরেশি ছিলেন একমাত্র নারী কমান্ডার।
গুজরাটের বাসিন্দা কুরেশি বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সোফিয়ার পরিবারের সম্পর্ক বহুদিনের। সোফিয়ার দাদা ও বাবা দুজনেই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। সোফিয়ার স্বামীও সেনা কর্মকর্তা। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি অফিসার।
সোফিয়া কুরেশি কুরেশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। যার মধ্যে ২০০৬ সালে কঙ্গোর মিশনে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। কুরেশির মতে, এসব মিশনে তার দায়িত্ব ছিল মানবিক সহায়তা ও সংঘর্ষপূর্ণ অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির পর্যবেক্ষণ করা।
এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা উচিত — এটি একটি গর্বের মুহূর্ত।’ কুরেশি বর্তমানে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।