আন্তর্জাতিক

প্রথমবারের মতো ড্রোন যুদ্ধে মুখোমুখি পরমাণু অস্ত্রধারী ভারত-পাকিস্তান

প্রথমবারের মতো ড্রোন যুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছে দুই পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশী ভারত পাকিস্তান। পেহেলগাম হামলার বদলা নিতে ড্রোনকেই মূল হাতিয়ার করেছে ভারত। ভারতের হামলার জবাবও নিজেদের ড্রোন দিয়েই দিচ্ছে পাকিস্তান।

শুক্রবার (৯ মে) পাকিস্তানের  গণমাধ্যম দ্যা ডন জানিয়েছে দেশটি এখন পর্যন্ত ৭৭ টি ভারতীয় ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে।

পেহেলগামে হামলার জবাবে ৭ মে রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করে ভারত। এর জবাবে ওইদিন রাতেই পাকিস্তানও ভারতে পাল্টা ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি।

হামলা পাল্টা হামলার পরেই গত ৮ মে রাতে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংসে হারোপ কামাকাজি ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করে ভারত। পাকিস্তানের লাহোর, করাচি, ভাওয়ালপুর, এট্যোক , গুজরানওয়ালা, চাকওয়াল, মিয়ানোসহ বেশ কিছু স্থানে এই ড্রোন হামলা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লে. জে. আহমেদ শরিফ চৌধুরী।

তবে প্রথম দফা হামলায় ভারতের ২৫ টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানান এ সামরিক কর্মকর্তা। শুক্রবার পর্যন্ত চালানো এ ড্রোন হামলায় মোট ৭৭ টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করবার দাবি করেছে পাকিস্তান।

এদিকে  ভারতের জম্মু, পাঠানকোট, উধামপুরসহ উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাকিস্তান মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।  নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে এ হামলা ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে দিল্লী। তবে ভারতে হামলার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

আমেরিকার নৌ যুদ্ধ কলেজের অধ্যাপক জাহারা মতিস্ক বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ একটি নতুন ড্রোন যুগে প্রবেশ করছে।  যেখানে 'অদৃশ্য চোখ'এবং মনুষ্যবিহীন নির্ভুলতা পরিস্থিতির তীব্রতাকে হ্রাসবৃদ্ধি করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আকাশে, ড্রোন যুদ্ধে পারদর্শিরা তাদের দক্ষতা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রই দেখাবে না, যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন রূপও নির্ধারণ করে দিবে।

ভারত পাকিস্তানে এই ড্রোন যুদ্ধে উঠে এসেছে ইসরায়েলের তৈরি হারোপ ড্রোনের নাম।  ইসরায়েলের সরকারি প্রতিরক্ষা কোম্পানি ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই) দ্বারা নির্মিত এ ড্রোন শত্রুর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, রাডার, যোগাযোগ কেন্দ্র বিশেষভাবে নিশানা করে ধ্বংস করবার জন্য বিখ্যাত।

ড্রোনগুলো সর্বোচ্চ পাল্লা ১,০০০ কিমি (প্রায়)। এটি ৬-৯ ঘণ্টা পর্যন্ত টার্গেটের ওপর চক্রাকারে উড়তে পারে। এছাড়াও হারোপ ড্রোনগুলোর ওয়ারহেড ২৩ কেজি উচ্চ-বিস্ফোরক বহন করতে পারে। ড্রোনটির গতি ঘণ্টায় ৪৬০ কিলোমিটার। এটি স্বল্প উচ্চতায় উড়তে এবং প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়াতে ও টার্গেট পরিবর্তন করতে সক্ষম।  ড্রোনগুলো গাড়ি কিংবা যুদ্ধজাহাজ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য।

ড্রোনের পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রাশিয়ার তৈরি এস ৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েই পাকিস্তানের হামলা ঠেকিয়েছে ভারত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের একটি। এটি আকাশে ৪০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্য বস্তুকে আঘাত ও ৬০০ কিমি পর্যন্ত হুমকি শনাক্ত করতে পারে। এটিতে চারটি ভিন্নধর্মী ক্ষেপণাস্ত্র থাকে যা দিয়ে ড্রোন, ক্রুজ এবং ব্যালেস্টিকা মিসাইল ধ্বংস করা সম্ভব।

এস ৪০০ ছাড়াও, বারাক ৮, এমআর স্যাম,আকাশ ও স্পাইডার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিজেদের আকাশসীমা রক্ষা করে ভারত।

অন্যদিকে চীন এবং তুরস্কের তৈরি ড্রোন ব্যবহারে করে আকাশের লড়াইয়ে নিজেদের জোড়ালো অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে পাকিস্তান। এর মধ্যে নির্ভরযোগ্য হলো তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার টিবি টু ড্রোন, বুরাক, শাহপার, সিএইচ৪বি, উইং লং২। তবে ভারতে হামলার দায় পাকিস্তান স্বীকার না করায় কোন ড্রোন ব্যবহার করে এসব হামলা করা হয়েছে সেটি জানা যায়নি।

নিজেদের আকাশ সীমা সুরক্ষিত রাখতে  চীনের তৈরি এইচকিউ ৯ এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা ব্যবহার করে পাকিস্তান। এ ব্যবস্থা দিয়ে আকাশে ১২০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। এই ব্যবস্থা ড্রোন, ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংস করতে সক্ষম।

ভারত পাকিস্তানে দ্বন্দ্ব বহু পুরানো। তবে সেই পুরানো দ্বন্দ্ব মোকাবেলায় প্রথমবারের মত নতুন অস্ত্র ব্যবহার করছে দুই পক্ষ। এ লড়াই শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে সেটি এখন দেখার অপেক্ষা।

 

 আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন