বাজারে হইচই ফেলা ‘জোঁকের তেল’: গোপন ক্ষমতার দাবি নাকি স্বাস্থ্যের ঝুঁকি
বিভিন্ন হারবাল ও আয়ুর্বেদিক তেলের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত হলো ‘জোঁকের তেল’। পুরুষদের যৌন শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়ে এই তেলের প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ ব্যাপক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ‘জোঁকের তেল’কে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি এবং আক্রান্ত অঞ্চলে রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর এক জাদুকরী সমাধান হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। অধিকাংশ ব্র্যান্ড দাবি করে, এতে অশ্বগন্ধা, মুসলি, শতাবরীর মতো প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং মাত্র কয়েক ফোঁটা ব্যবহারেই আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়।
তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ ‘জোঁকের তেল’ অনুমোদনবিহীন এবং এর ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেক পণ্যে স্টেরয়েড বা ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো থাকে, যা ত্বকে জ্বালা, অ্যালার্জি ও দীর্ঘমেয়াদি যৌন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। স্কিনেজ ডার্মাকেয়ারের চিফ কনসালটেন্ট ডা. তাসনিম তামান্না হক জানান, জোঁকের তেলের ওপর এখনও সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। যেহেতু হিরুডোথেরাপি বা জোঁক থেরাপি একটি প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি, বর্তমানে তা ব্যবহৃত হয় না। বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন রোগী, ক্যান্সার ও কেমোথেরাপি চলমান ব্যক্তি, তাদের জন্য এই তেল ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়াও ব্লাড-থিনার ওষুধ সেবনকারী ও রক্তপাত সহজে বন্ধ না হওয়া ব্যক্তিদের জন্য এর ব্যবহার বিপজ্জনক।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে যাদের ডেঙ্গু রয়েছে কিনা নিশ্চিত নয়, তাদের ‘জোঁকের তেল’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিৎ। দেশে এই তেলের উৎপাদন ও বিপণনে ঔষধ প্রশাসনের কোনও লাইসেন্স নেই, ফলে এর উপাদান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এর কারণে এলার্জি, সেলুলাইটিস, কুশিং সিন্ড্রোম এবং এড্রেনাল ইনসাফিশিয়েন্সিসহ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
ব্যবহারের পূর্বে করণীয় -
১. যেকোনো ধরনের তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে যদি যৌন সমস্যা বা ত্বকের সংবেদনশীলতা থাকে।
২. ব্র্যান্ডের প্রলোভনে পড়বেন না, বরং পরীক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য পণ্য বেছে নিন।
৩. ডেঙ্গু বা অন্য কোনও রোগ চলমান থাকলে ‘জোঁকের তেল’ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
অতএব, ‘জোঁকের তেল’ যতই আকর্ষণীয় প্রচার করা হোক না কেন এর ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। অনুমোদনবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য থেকে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
এসকে//