লাইফস্টাইল

চোখে ক্যান্সার : লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

চোখের ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে জটিল রোগে, যা প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত লক্ষণ দেখা দেয় না। যদি এটি সময়মতো শনাক্ত না করা হয়, তবে এটি গুরুতর হতে পারে এবং রোগীকে বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে। চোখের ক্যান্সার মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে প্রাইমারি চক্ষু ক্যান্সার (যা চোখের নিজস্ব কোষে তৈরি হয়) এবং সেকেন্ডারি ক্যান্সার (যা অন্য কোনও স্থান থেকে চোখে ছড়িয়ে আসে)। চোখের ক্যান্সার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো। 

প্রধান ধরনের ধরণ -

রেটিনোব্লাস্টোমা

এটি একটি প্রাথমিক ক্যান্সার, যা সাধারণত শিশুদের চোখে দেখা যায়। রেটিনায় সৃষ্ট টিউমারটি দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করতে পারে এবং জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

চোখের মেলানোমা

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি সবচেয়ে সাধারণ চোখের ক্যান্সার, যা চোখের আইরিস, কোরোয়িড বা রেটিনায় দেখা যায়। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।

প্রাইমারি চক্ষু লিম্ফোমা

চোখের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের কোষ থেকে শুরু হয়ে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং চিকিৎসায় ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।

কোরোয়িড ক্যান্সার 

চোখের রেটিনার পিছনের অংশ বা কোরোয়িডে এই ক্যান্সার দেখা যায়, যা চোখের ভিতরের অংশে সৃষ্ট টিউমারের কারণে হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ - 

চোখে ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ যা আপনাকে সতর্ক করবে:

• চোখে কালো দাগ বা গোঁফ: বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে রেটিনোব্লাস্টোমার লক্ষণ হিসেবে এটি দেখা যায়।

• দৃষ্টি সমস্যা: চোখের মধ্যে অস্পষ্টতা বা ঝাপসা দেখা দিতে পারে।

• চোখের রঙ পরিবর্তন: আইরিসের রঙ পরিবর্তন হতে পারে বা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে।

• চোখে ব্যথা বা অস্বস্তি: চোখে অতিরিক্ত ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূতি।

• চোখে লালচে ভাব বা ফোলা: চোখের চারপাশে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।

চোখে ক্যান্সারের কারণ -

চোখে ক্যান্সারের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি, তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে যা চোখে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়:

• জেনেটিক প্রবণতা: বিশেষ করে রেটিনোব্লাস্টোমা শিশুর মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এটি একটি বংশগত সমস্যা হতে পারে।

• আলোক প্রতিক্রিয়া (UV রশ্মি): সূর্যের অতিরিক্ত তাপ এবং UV রশ্মির প্রভাবে চোখে ক্যান্সার হতে পারে।

• রাসায়নিক প্রভাব: পরিবেশ দূষণ এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থ, যেমন কেমিক্যাল এক্সপোজার, চোখে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

• বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে মেলানোমা এবং কোরোয়িড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।

চোখে ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি -

চোখে ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরণ এবং অবস্থানের উপর। চিকিৎসার মূল পদ্ধতিগুলি হল:

• সার্জারি: যদি ক্যান্সার চোখের নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এটি অপারেশন করে সরানো যেতে পারে।

• রেডিয়েশন থেরাপি: টিউমার সঙ্কুচিত করতে রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়, যা কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার নির্মূল করতে সহায়ক হতে পারে।

• কেমোথেরাপি: রেটিনোব্লাস্টোমা বা চোখের মেলানোমা চিকিৎসায় কেমোথেরাপি কার্যকর হতে পারে।

• লেজার থেরাপি: এই থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করা হয় এবং এটি অল্প ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

প্রতিকার ও সচেতনতা -

চোখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে:

• নিয়মিত চোখের পরীক্ষা: চোখের অবস্থা বুঝতে এবং সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে চক্ষু বিশেষজ্ঞকে নিয়মিত পরিদর্শন করা জরুরি।

• সূর্যের আলোর থেকে সুরক্ষা: অতিরিক্ত সূর্যের রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করতে সানগ্লাস ব্যবহার করুন এবং সূর্যের তীব্র তাপ থেকে বাঁচুন।

• রাসায়নিক প্রভাব থেকে দূরে থাকুন: কাজের ক্ষেত্রে যদি রাসায়নিক বা ধোঁয়ার মধ্যে থাকতে হয়, তবে প্রোটেকটিভ গিয়ার ব্যবহার করুন।

• পরিবারের ইতিহাস জানুন: যদি আপনার পরিবারে কেউ চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনার চোখের নিয়মিত পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

চোখের ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ হলেও, এটি যদি সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তবে চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করা সম্ভব। তাই, চোখের যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। সুরক্ষা ও সচেতনতাই চোখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ।

সূত্র :

• Mayo Clinic, Eye Cancer (Retinoblastoma, Uveal Melanoma).

• National Cancer Institute, Eye Cancer Overview.

• American Cancer Society, Retinoblastoma and Other Eye Cancers.

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন