৯০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র কিনবে ইউক্রেন: জেলেনস্কি
রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ বন্ধে যেকোনো চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
এ বিষয়ে জেলেনস্কি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করবে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি বলেছেন ‘কার্যত আমাদের এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবিত প্যাকেজ আছে, যার অর্থমূল্য ৯০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রপ্তানি চালু হলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় ড্রোন কিনবে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠককে এখন পর্যন্ত ‘সেরা বৈঠক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমন্বয় করবে না, বরং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশীদারও হবে— এমন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে পাওয়া যাচ্ছে। আমি মনে করি, এটি একটি বড় অগ্রগতি।”
তবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা দেবে, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
যুদ্ধ বন্ধে চলতি সপ্তাহে শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দলের সোমবার বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। এই বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য আসবে। ইউরোপীয় দেশগুলো এতে জড়িত থাকবে। তারা প্রথম প্রতিরক্ষা বাহিনী কারণ তারা সেখানে আছে, তবে আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করব।
মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতিকে ‘একটি বড় পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, গ্যারান্টিগুলো ‘আগামী সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে। ইউক্রেন প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন অস্ত্র কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো ধরনের বৈঠকে বসতে প্রস্তুত আছে। ভূখণ্ড বিনিময়ের বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোকচনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা হবে সরাসরি। এটি আমার আর পুতিনের মধ্যে থাকবে।’
ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউরোপীয় নেতা ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনে কাজ শুরু করেছেন তিনি। যুদ্ধরত এই দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে বৈঠকের পর একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ওই বৈঠকে আমিও থাকব’।
হোয়াইট হাউসে বৈঠক শেষে ওভাল অফিসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা বলেন। এছাড়া নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টেও একই কথা বলেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনে কাজ শুরু করেছি। তবে কবে, কোথায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, সেই বিষয়ে কিছু জানাননি।
ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। এই দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের পর আমাদের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে দুই প্রেসিডেন্টের (পুতিন ও জেলেনস্কি) আমি থাকব।
তিনি জানান, আজকের বৈঠকগুলোতে মূল আলোচনার বিষয় ছিল ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এ নিশ্চয়তা দেবে, যার সমন্বয় করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একজন কূটনীতিক বৈঠকের মাঝপথে ট্রাম্পের পুতিনকে ফোন করার বিষয়টি রয়টার্সকে জানিয়েছেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে ৪০ মিনিট কথা হয়ে বলে পুতিনের একজন সহকারী জানিয়েছেন। ট্রাম্প–পুতিনের ফোনালাপের পর আবারও বৈঠক শুরু হয়।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি ইতিমধ্যেই বিশ্বে ছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছি। এই যুদ্ধও হয়তো সহজে শেষ হবে ভেবেছিলাম, কিন্তু তা হয়নি। এটি সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী, আমরা সমাধান বের করতে পারব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আজকের বৈঠক শেষ নয়। মানুষ মারা যাচ্ছে, আমরা তা রুখতে চাই। আমার বিশ্বাস, পুতিনও যুদ্ধ শেষ করতে চান।”
যুদ্ধ বন্ধ সংক্রান্ত সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “এই যুদ্ধ শেষ হবে। জেলেনস্কি চান, পুতিনও চান, গোটা বিশ্বই ক্লান্ত। আমরা এটিকে থামাব। আমরা চাই যুদ্ধবিরতি নয়, সরাসরি শান্তিচুক্তি। শান্তিচুক্তি হলে সব পক্ষ আবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে। আমি মনে করি, সরাসরি শান্তিচুক্তিই সঠিক পথ।”
এসি//