সুস্থ থাকতে নিয়ন্ত্রণে রাখুন স্ট্রেস হরমোন
বর্তমান জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে চাপ-দুশ্চিন্তা আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে নিঃসৃত স্ট্রেস হরমোন বা কোর্টিসল। যখন কোর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন তা আমাদের শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে এবং মানসিক অশান্তি, শারীরিক অসুস্থতা এমনকি দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। তবে চিন্তা করবেন না, কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি কোর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।
যোগব্যায়াম এবং ধ্যান :
যোগব্যায়াম এবং ধ্যান শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যই নয় মানসিক শান্তির জন্যও অপরিহার্য। এটি এমন এক অভ্যাস, যা শরীরের স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কোর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ১৫ মিনিট যোগব্যায়াম বা ধ্যান করুন। বিশেষভাবে প্রাণায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কোর্টিসল কমাতে খুবই উপকারী। তাই প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে কিছু সময় যোগব্যায়াম বা ধ্যানের জন্য নির্ধারণ করুন। এর মাধ্যমে আপনি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন এবং শরীরকে স্বস্তি দেবেন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস :
খাবার আমাদের শরীরের জন্য যেমন শক্তি দেয়, তেমনি কিছু খাবার কোর্টিসলের মাত্রা বাড়াতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। ক্যাফেইন বা অতিরিক্ত চিনির খাবার কোর্টিসল বাড়াতে পারে, তাই এগুলি কমিয়ে দিন। অতএব, আপনার খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফল, বাদাম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ এবং প্রোটিন রাখুন। কফি, চকোলেট এবং প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ব্যায়াম :
শারীরিক ব্যায়াম শরীরের জন্য প্রাকৃতিকভাবে এক ধরনের সুখী হরমোন, এন্ডোরফিন নিঃসৃত করে। এই হরমোন কোর্টিসলের সাথে লড়াই করে, মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করা স্ট্রেস কমানোর একটি খুব কার্যকরী উপায়। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন। দৌড়ানো, সাইক্লিং বা হাঁটা যেকোনো শারীরিক কার্যকলাপই আপনার কোর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
ঘুম :
ঘুম আমাদের শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতে সঠিক পরিমাণে ঘুম শরীরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে এবং কোর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ঘুম না হলে শরীরে কোর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করতে পারে।তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের আগে ফোন বা টিভি থেকে দূরে থাকুন এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন।
সামাজিক সম্পর্ক :
আমরা যখন প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাই, তখন আমাদের মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। হাসির মাধ্যমে অ্যাড্রেনালিন এবং সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়, যা স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। তাই সামাজিক সম্পর্কের ওপর নজর দিন এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান।এমনকি সপ্তাহে এক বা দুই দিন প্রিয়জনদের সাথে বাইরে যান, হাস্যরসাত্মক সিনেমা দেখুন বা বন্ধুর সাথে আড্ডা দিন। এটি কোর্টিসল কমাতে সাহায্য করবে এবং মানসিক চাপ হালকা করবে।
স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক কিছু প্রয়োজন নেই। প্রকৃতপক্ষে, আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত করলেই আপনি স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবেন। যোগব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়াম, ভালো ঘুম এবং সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে আপনার জীবনকে আরও সুখময় এবং শান্তিপূর্ণ করে তুলুন।
সূত্র :
• National Institute of Mental Health (NIMH)
• American Psychological Association (APA)
• Harvard Health Publishing
এসকে//