বিনোদন

আজ নায়ক রাজ্জাকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী

বাংলা চলচ্চিত্রের অবিস্মরণীয় কিংবদন্তি নায়ক রাজ আব্দুর রাজ্জাকের আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের এই দিনে ৭৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পৃথিবী থেকে চলে যান। তার প্রয়াণ বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়। তবে তার অবদান, কাজ, এবং স্মৃতি আজও আমাদের মাঝে 

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুর রাজ্জাক। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে অভিনয়ের প্রতি একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। এই আকর্ষণ তাকে কলকাতার থিয়েটারে অভিনয়ের দিকে প্রেরণা দেয়। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়ে সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা ও ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন এবং চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের প্রস্তুতি নেন।  তবে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে ১৯৬৪ সালে তিনি তার পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে ১৯৬০ সালের শেষ দিকে, পরিচালক সালাউদ্দিন-এর ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রাজ্জাকের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয়। এরপর ‘কার বউ’ ও ‘ডাক বাবু’ সিনেমাতেও অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মন জয় করেন। তবে, ১৯৬৬ সালে ‘বেহুলা’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রের সোনালী যুগ শুরু হয়।

রাজ্জাক ৩০০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং ৬০ এর দশক থেকে ৮০-এর দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।  তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘মধু মিলন’, ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অবুঝ মন’। 

রাজ্জাকের সাথে সুচন্দা, কবরী, শাবানা, ববিতা এই নামী অভিনেত্রীদের সঙ্গে করা সিনেমাগুলোর প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা আজও অমলিন।  তার অভিনয় ছিল এতটাই প্রাকৃতিক এবং আবেদনময়, যে তিনি প্রতিটি চরিত্রে প্রাণ ঢালতেন।  একই সাথে রাজ্জাক ১৬টি সিনেমা পরিচালনা করেছেন যা তার বহুমুখী প্রতিভার এক দৃষ্টান্ত।

রাজ্জাকের ব্যক্তিগত জীবন ছিল সুখী। তিনি রাজলক্ষ্মী-এর সাথে দাম্পত্য জীবনে তিন পুত্র ও দুই কন্যার পিতা হন। তার দুই ছেলে বাপ্পারাজ এবং সম্রাটও বাংলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তারা তাদের বাবার পথ অনুসরণ করে চলচ্চিত্র জগতে অবদান রাখছেন।

রাজ্জাকের জীবন ছিল নানা ধরনের অসুখের সাথে লড়াই। দীর্ঘকালীন অসুস্থতার পর ২০১৭ সালে তার মৃত্যু ঘটে। তার চলে যাওয়ার পর বাংলা চলচ্চিত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূর্ণ হওয়ার নয়।  তবে তার কাজ, সিনেমা, এবং স্মৃতি আজও তার অসংখ্য ভক্তের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।

বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। প্রতি বছর তার মৃত্যুবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে উপস্থিত হন। নায়করাজ আব্দুর রাজ্জাক আজও বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন।

এসকে//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন