লাইফস্টাইল

সত্যিই কি বার্ধক্যের গতি বাড়িয়ে দেয় তীব্র গরম

গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও অস্বাভাবিক গরম আবহাওয়া এখন শুধু জলবায়ুর সংকট নয়, মানবদেহের জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, তীব্র গরম শরীরের কোষের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয় এবং বার্ধক্যের গতি ত্বরান্বিত করে।

গরম বার্ধক্য যেভাবে বাড়ায়- 

কোষের ক্ষয়: অতিরিক্ত তাপে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে ঘাম ও ডিহাইড্রেশন হয়। এর ফলে কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ে, যা ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রোটিন ক্ষতি: উচ্চ তাপমাত্রা শরীরে থাকা প্রোটিন ভেঙে দেয়, ফলে টিস্যু দ্রুত দুর্বল হয়।

মাইটোকন্ড্রিয়া দুর্বলতা: মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় কোষের পাওয়ারহাউস। তাপজনিত চাপ এটিকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে শরীরে শক্তি উৎপাদন কমে যায়।

ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত: দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে সংক্রমণ ও প্রদাহ বাড়ে যা বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে।

গবেষণার প্রমাণ- 

প্রাণীভিত্তিক গবেষণা: ইঁদুরের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গরম পরিবেশে বেড়ে ওঠা ইঁদুরের জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম।

মানবদেহে প্রভাব: দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার গরমপ্রবণ অঞ্চলে মানুষের মধ্যে ডিহাইড্রেশন, কিডনির সমস্যা, ত্বকের আগাম ভাঁজ ও ক্লান্তির হার বেশি। এগুলো বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ।

হিট স্ট্রেস ও এজিং জিন: গবেষণায় বলা হয়েছে, তীব্র গরমে কিছু জিন (যেমন HSP জিন) অতিরিক্ত সক্রিয় হয়। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব বার্ধক্যের গতি বাড়িয়ে দেয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী বলছেন, "অতিরিক্ত তাপে শরীর ক্রমাগত স্ট্রেসের মধ্যে থাকে। এটা আসলে শরীরকে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত বুড়ো করে তোলে।"

•বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, “আমাদের অঞ্চলে গরমের তীব্রতা বার্ধক্য ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও বড় স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে।”

সুরক্ষা পাবেন যেভাবে- 

•দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে বাইরে না বেরোনো।

•পর্যাপ্ত পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট পান করা।

•হালকা, ঢিলেঢালা ও সুতির কাপড় পরা।

•ঘরের ভেতরে গাছ বা কুলার ব্যবহার করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ।

•অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার (ফল, শাকসবজি, গ্রিন টি) গ্রহণ।

তীব্র গরম শুধু অস্বস্তি নয় এটি নীরবে শরীরের ভেতরে বার্ধক্যের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে গরম থেকে সুরক্ষিত থাকা এখন বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি স্বাস্থ্য সুরক্ষা।

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন