আন্তর্জাতিক

কাতারের প্রতি পূর্ণ সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ আরব-মুসলিম বিশ্ব

ইসরায়েলের সম্প্রতি কাতারে চালানো হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব ও মুসলিম দেশগুলো। দোহায় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় এই হামলাকে আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সম্মেলনে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা এবং এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব নেতারা ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এক গভীর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দোহাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে, কাতারের সংযমী ও নীতিগত অবস্থানকে প্রশংসা করা হয়। এই হামলা কাতারের জন্য একটি কাপুরুষোচিত ও বেআইনি আক্রমণ, যা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে।

আরব ও ইসলামিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কাতারের নিরাপত্তাকে আরব ও ইসলামি বিশ্বের জাতীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তারা ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং বিপজ্জনক উত্তেজনা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানান, এই সম্মেলন আরব-ইসলামিক বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির প্রতিফলন। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। সম্মেলনের পর, রোববারের বৈঠকে গৃহীত খসড়া বিবৃতি চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

এই হামলার জন্য ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গত ৯ সেপ্টেম্বর কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা নির্ভুলভাবে হামাসের নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, হামাস জানিয়েছে, এটি প্রমাণ করে যে, ইসরায়েল সরকার কোনো সমঝোতা চায় না, বরং সব প্রচেষ্টাকে বানচাল করতে চায়।

দোহায় আবাসিক ভবন টার্গেট করে চালানো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

ইসরায়েলের আক্রমণ ঠেকাতে সম্ভাব্য সব আইনি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আরব ও মুসলিম নেতারা একতাবদ্ধ হয়েছে। তারা কাতারের রাজধানীতে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যেখানে ৫৭টি আরব ও ইসলামিক দেশের নেতারা অংশ নেন।

তাদের মতে, হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার প্রতিবাদে তারা একযোগে কাজ করবেন। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (GCC) শীর্ষ বৈঠকেও সম্মতি জানানো হয়েছে, যেখানে তারা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল জাসেম মোহামেদ আল-বুদাইয়ি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা রয়েছে ইসরায়েলকে সংযত করতে এবং তারা যেন এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ৫৭টি দেশ মিলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কাতার সফর করবেন এবং সেখানে কাতারের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেবেন।

সূত্র: আল জাজিরা

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন