গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। ভূমিধ্বসের মতো বিস্ফোরণের মধ্যে গাজার বিভিন্ন এলাকা, হাসপাতাল এবং রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বশেষ হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজার চিকিৎসকরা এ তথ্য দিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরা, এবং পালানোর সময় ট্রাকে থাকা চার যাত্রীও নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাতের হামলায় গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল 'আল-শিফা'র পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী আক্রমণ চালায়। এতে তার ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানসহ অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারান।
ডা. আবু সালমিয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমি যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছিলাম, তখন আমার ভাইয়ের মরদেহ দেখতে হলো। এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই, আপনি জানেন না আপনার প্রিয়জনরা কখন মারা যাবেন।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা গাজা শহরের অন্তত ২০টি বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব ভবনে হামাস অবস্থান করত বলেই তাদের ভাষ্য। তবে এসব হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেসামরিক এলাকা। বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের অবস্থা ভয়াবহ। আন্তর্জাতিক মেডিকেল সংগঠন এমএসএফ জানিয়েছে, সেখানে নেই পানি, খাবার, চিকিৎসা কিংবা থাকার ব্যবস্থা। মানুষের হাতে কিছুই নেই, শুধু আতঙ্ক আর ক্লান্তি। উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলো একাধিকবার ঘর হারিয়েছে। এবার আর ফিরে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা ছেড়ে পালাতে একটি পরিবারকে প্রায় চার লাখ টাকা সমমূল্যের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ভাড়া, তাঁবু কেনা এবং নতুন জায়গায় জমি ভাড়া নেওয়ার খরচ। যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে যেহেতু আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, তাই এত খরচ চালানো অধিকাংশ ফিলিস্তিনির পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরিতে ব্যবহৃত সামগ্রী গাজার ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এর ফলে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বৃদ্ধরা পানির অভাবে মৃত্যুর মুখে।
হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরকবোঝাই ড্রোন ব্যবহার করছে, যা সরাসরি যুদ্ধাপরাধের শামিল। সংগঠনটি জানায়, যুদ্ধের নিয়ম মেনেই তারা প্রতিরোধ করছে, কিন্তু ইসরায়েলের হামলা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
একইসঙ্গে, হামাসের সামরিক শাখা ‘কাশেম ব্রিগেডস’ একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে জীবিত ও মৃত ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির ছবি একসাথে দেখানো হয়েছে। এটিকে ‘বিদায়ী ছবি’ বা Farewell Picture হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে ভিন্ন মত দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের এই অভিযানের সমালোচনা না করে বরং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলাকেই ‘গণহত্যা’ বলেছেন।
সূত্র: আল জাজিরা
এসি//