দেশজুড়ে

সুন্নত নামাজ না পড়ায় মুখে টুপি গুজে ছাত্রকে বেধরক মারধর

যোহরের নামাজে ফরজ শেষে সুন্নত নামাজ না পড়ার অভিযোগে এক মাদরাসা ছাত্রকে মুখে টুপি গুজে বেধরক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সাব্বির হোসেন নাসির (১২)। তার বাড়ি সদর উপজেলার পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকায়। স্বর্ণকার বেলাল হোসেন ও গৃহিনী ইয়াসমিন আক্তারের একমাত্র ছেলে নাসির। সে মাদরাসাটিতে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছে। ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হাফেজ মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ পলাতক রয়েছে।

গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরের লিচুতলা এলাকার আত-তাক্বওয়া ওয়াস্সুন্নাহ হিফজ্ মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা লিখিত অভিযোগ করেছেন,  ওসি আব্দুল্লাহ হিল জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন নাসির জানায়, আমি সুন্নত নামাজ না পড়ায় আসাদ হুজুর আমাকে মারধর শুরু করে। আমি চিৎকার করলে আমার মুখে টুপি গুজে দিয়ে মারতে থাকে। কয়েকজন ছাত্র হাত ধরে থাকে আর তিনি আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারতে থাকেন। যেভাবে আমার মুখে টুপি গুজে দিয়েছে আরেকটু হলে আমি মরেই যেতাম। আমার গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেছে

তিনি বলেন,  মুখে কাপড় গুজে দেয়ার জেরে তার মুখের তালু কয়েক স্থানে ছিলে যায়। তবুও ক্ষান্ত না হয়ে কয়েকজন ছাত্র তার দুই হাত ধরে থাকেন আর হুজুর দুই হাত, ঘাড়, গলা সহ কোমরের নিচে বেধরক মারধর করে। কোনমতে পালিয়ে বাঁচতে চাইলেও আবারো তাকে মারধরের জন্য হুজুরের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে আসেন।

শিক্ষার্থীর বাবা বেলাল হোসেন জানান, আমার ছেলেকে এর আগেও নির্যাতন করা হয়েছে। ওইদিন যেভাবে মুখে টুপি গুজে দিয়ে মারধর করা হয়েছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। কোন সুস্থ মানুষ একটা শিশুটিকে এভাবে মারধর করতে পারে না। আমার ছেলেকে তারা মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ও কোনমতে পালিয়ে বেঁচে গেছে। এখন আবার আসাদ হুজুর আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই

জানা গেছে, গত তিন মাস আগে মাদরাসাটিতে হেফজ বিভাগে ভর্তি হয় নাসির। ভর্তির কিছুদিন পরেই একবার মারধরের শিকার হয় সে। সেসময় বাড়িতে চলে গেলেও ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানাতে হবে এমন দৃঢ়চিত্তে আবারো মাদরাসাতে ফিরিয়ে দিয়ে যায় পরিবার। তবে এবারের মারধর যে অন্য সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।

ওসি আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, শিশু নির্যাতনের অভিযোগে তার বাবা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আসাদুজ্জামান আসাদসহ তিন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) রহিমুল ইসলাম বলেন, শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে সে হাসপাতালেই ভর্তি আছে। আমরা তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি।

এ ঘটনায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে রাজি হন নি।

আই/এ 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন