বিজয়া দশমী আজ: বিদায়ের সুরে দেবী দুর্গার বিসর্জন
শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ প্রহর মানেই বিদায়ের সুর। ঢাকের বাজনা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনির মাঝেই বেজে ওঠে বিষণ্নতার সুর—মা চলে যাচ্ছেন কৈলাসে, রেখে যাচ্ছেন ভক্তদের হৃদয়ে অসীম ভালোবাসা আর আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে আজকের দিনে—বিজয়া দশমীতে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ শারদ উৎসব। তবে বিদায়ের এই মুহূর্তেও বিজয়া দশমী কেবল বেদনার নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব ও শুভ্রতার আলোয় ভাস্বর হয়ে ওঠে।
বৃহস্পতিবার (০২ অক্টোবর) সকালে দেশজুড়ে পূজামণ্ডপগুলোতে শুরু হয়েছে দেবীর দশমী বিহিত পূজা। পূজা শেষে হবে দর্পণ বিসর্জন—যেখানে প্রতিমার প্রতিফলনকে জলে ভাসিয়ে ভক্তরা জানান দেবীকে বিদায়ের শুভেচ্ছা।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দশমীর পূজা শুরু হয়েছে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে। এর পরপরই থাকবে দর্পণ বিসর্জন এবং দুপুর ১২টায় নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী বিজয়ার শোভাযাত্রা। রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা এসে মিলিত হবে ঢাকেশ্বরীতে, সেখান থেকে সম্মিলিত শোভাযাত্রা এগিয়ে যাবে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাট বিসর্জন ঘাটে। সন্ধ্যার মধ্যেই সেখানেই সম্পন্ন হবে প্রতিমা নিরঞ্জন।
হিন্দুশাস্ত্রমতে, এ বছর দেবীর আগমন হয়েছিল গজে, আর গমন হচ্ছে দোলায়।
বিজয়া দশমীর অন্যতম আবেগঘন আয়োজন হলো সিঁদুর খেলা। সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, বনানী মণ্ডপ ও ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মণ্ডপসহ ঢাকার বিভিন্ন মণ্ডপে নারী ভক্তরা দেবীর চরণে সিঁদুর অর্পণ করে তা নিজেদের সিঁথিতে পরেন, তারপর একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। শাস্ত্রমতে, স্বামীর দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনায় নারীরা দেবীর সিঁথি থেকে সিঁদুর ধারণ করে থাকেন। পান-মিষ্টির সঙ্গে এই সিঁদুর খেলায় মিলেমিশে যায় আনন্দ ও আধ্যাত্মিকতা।
তবে বিজয়া দশমীর আসল তাৎপর্য শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, এ দিন দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যান দোলায় চড়ে। আর ভক্তদের জন্য এ দিনটি এক গভীর প্রতীকের দিন—কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা প্রভৃতি অসুরিক প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয় বিজয়া দশমী। এভাবেই দেবীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভেতরের অশুভ প্রবৃত্তিরও বিদায় কামনা করা হয়।
অতএব, বিদায়েই যেন লুকিয়ে থাকে নতুন প্রার্থনার আলো। প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হৃদয়ে জেগে ওঠে নতুন প্রত্যাশা—অশুভকে দূরে সরিয়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বে ভরে উঠুক সমগ্র বিশ্ব।
এসি//