আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

এবার মাস্কেই মরবে করোনাভাইরাস

মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল গোটা বিশ্ব। যেন কিছুতেই পোষ মানছে না এই অদৃশ্য দানব। প্রতিদিনই বাড়ছে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক, সঠিক জীবাণু মুক্তিকরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন মাস্ক বানিয়েছেন ভারতের একদল গবেষক। যা শুধু ভাইরাসকে শরীরে প্রবেশ থেকে আটকাতেই সাহায্য করে না, মাস্কের ওপর চলে আসা মারণ ভাইরাসকে মেরেও ফেলে।

সারা বিশ্বের কাছেই এই গবেষণা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে চলেছে বলে দাবি করলেন আইআইটি মান্ডির একদল গবেষক। সম্প্রতি আমেরিকার একটি জার্নাল ‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি- অ্যাপ্লায়েড মেটেরিয়ালস অ্যান্ড ইন্টারফেসেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা।

মহামারি করোনা রুখতে আশা দেখাচ্ছেন আইআইটি মান্ডির গবেষক অমিত জায়সওয়ালের নেতৃত্বে সৌনক রায়, প্রবীণ কুমার এবং অনিতা সরকারের নিরন্তর পরিশ্রম। ‘মলিবডেনাম ডাইসালফাইড’ নামক বিশেষ উপাদান দিয়ে একটি চুলের থেকেও কয়েকগুণ পাতলা একটি আস্তরণ তৈরি করা হয়েছে। যা মাস্কের ওপরে লাগিয়ে দিচ্ছেন গবেষকরা।

এ উপাদানটিরই নাকি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণাগুণ রয়েছে। ১০০ থেকে ২০০ ন্যানোমিটারের কোনো ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া এই আস্তরণের ওপর চলে এলে নিমেষে তাকে মেরে ফেলে ওই আস্তরণ। করোনাভাইরাসটি ১২০ ন্যানোমিটারের। তাই এ উপাদানের সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাসও মারা যায়।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, মলিবডেনাম ডাইসালফাইডের ওই আস্তরণ জীবাণুনাশে দুভাবে কাজ করে। এর উপরিতল অত্যন্ত ধারালো। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় দেখলে মনে হবে ঠিক যেন অনেকগুলো ছুরি পরপর রাখা রয়েছে। করোনা বা কোনো জীবাণুর সংস্পর্শে এলেই তাদের কোষপর্দা ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে ছুরির মতো ধারালো অংশগুলো। ফলে মারা যায় ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া।

সূর্যের আলোয় অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে এই উপাদান। কিছুক্ষণ সূর্যালোকে থাকলেই ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত এর তাপমাত্রা হয়ে যায়। যা অনেক জীবাণুকেই বাঁচতে দেয় না। মাস্কের ওপর ঘাঁটি গড়ে তোলা করোনা মেরে ফেলার জন্য নিশ্চিন্ত হয়ে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে এই মাস্ক। 

আবার সহজেই শুধু রোদে ফেলে রেখে জীবাণুমুক্তও করে ফেলা যায়। এই উপাদানের আরও একটি বিশেষত্ব হলো বারবার সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করলেও এর কার্যকারিতার কোনো হেরফের হয় না।  

পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৬০ বার সাবান-পানিতে ধোয়ার পরও একইভাবে জীবাণু ধ্বংস করতে পারছে এই উপাদানে তৈরি মাস্ক। এই উপাদান দিয়ে শুধু মাস্কই নয়, পিপিইও তৈরি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। 

এই উপাদান পরে শ্বাস নিতেও কোনো কষ্ট হবে না বলেও দাবি করছেন তারা। এর সঠিক ব্যবহারে মাস্কের সংস্পর্শে আসা ৯০ শতাংশেরও বেশি জীবাণু ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, দাবি গবেষকদের। 

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন