আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ভারতে বেড খালি নেই বহু হাসপাতালে, বাঁচানোর লড়াই বাড়িতেই

ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং আরো অনেক শহরের হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। খালি থাকলেও অক্সিজেনের অভাবে রোগী নিচ্ছে না বহু হাসপাতাল। ফলে গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীদের বাড়িতেই চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছে স্বজনরা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা জানায়, স্বজনদের জীবন বাঁচানোর জন্য বহু মানুষকে কালো বাজারের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। সেখানে জরুরী ওষুধ এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম এখন আকাশচুম্বী।

কোভিড চিকিৎসার নামে গোপনে এমন সব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে যা আসল না নকল এবং আদৌ ব্যবহার করা উচিৎ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

কোভিড আক্রান্ত শ্বশুরের চিকিৎসার জন্য দিল্লি বা শহরতলী নয়ডার কোনো হাসপাতালেই জায়গা পাননি অংশু প্রিয়া। শ্বশুরের অবস্থা ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে। কিন্তু সারাদিন ঘুরেও এক সিলিন্ডার অক্সিজেন জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। বাধ্য হয়ে ৫০ হাজার রুপি দিয়ে এক সিলিন্ডার অক্সিজেন কেনেন কালোবাজার থেকে। স্বাভাবিক সময়ে সিলিন্ডারটির দাম বড়জোর ছয় হাজার রুপি।

শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে তার শাশুড়িরও। কিন্তু অংশু প্রিয়া জানেন এত দামে কালোবাজার থেকে আরেকটি সিলিন্ডার কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

শুধু দিল্লি বা নয়ডা নয়। এখন এই একই কাহিনী লখনৌ, এলাহাবাদ, ইন্দোর বা এমন বহু শহরের। হাসাপাতালে জায়গা না পেয়ে ঘরেই জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে মানুষজন।

ভারতের সিংহভাগ মানুষেরই কালোবাজার থেকে ওষুধ বা অক্সিজেন কেনার সামর্থ্য নেই। কালোবাজার থেকে ওষুধ বা অক্সিজেন কিনতে না পেরে অনেক রোগী হাসপাতালের গেটে বা সিঁড়িতে মারা গেছে বলে অনেক খবর এবং ছবি বেরিয়েছে।

বিবিসি কয়েকজন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতার কাছে ফোন করলে স্বাভাবিক দামের চেয়ে দশগুণ পর্যন্ত দাম হাঁকে তারা। বিশেষ করে দিল্লির পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। রাজধানীর একটি হাসপাতালেও কোন আইসিইউ বেড খালি নেই। অনেক ধনী পরিবার বহু টাকা দিয়ে বাড়িতেই নার্স রেখে এবং ডাক্তার দিয়ে প্রিয়জনের শ্বাস-প্রশ্বাস অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে।

এখন রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে বা সিটি স্ক্যান করা খুবই কঠিন কাজ হয়ে পড়েছে। ল্যাবগুলোর ওপর অস্বাভাবিক চাপ থাকায় রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে। সিটি স্ক্যান করার সময় পেতেই লাগছে কয়েকদিন। এতে ডাক্তারদেরও রোগীর অবস্থা বোঝা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছে, বিভিন্ন জরুরী পরীক্ষার এই দেরিতে হুমকির মুখে পড়েছে রোগীর জীবন। কোভিডের টেস্ট করতেও (আরটি-পিসিআর) কয়েকদিন লেগে যাচ্ছে। এমন কয়েকজন রোগী আছে যারা কোভিড পজিটিভ পরীক্ষার রিপোর্ট নেই বলে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি।

দিল্লির বাসিন্দা অনুজ তিওয়ারি জানালেন, কোনো হাসপাতাল তার ভাইকে ভর্তি করতে রাজী না হওয়ায় বাড়িতে একজন নার্স জোগাড় করেছেন তিনি। অনেক হাসপাতাল বলে দিচ্ছে কোনো খালি বেড নেই। আবার অনেক হাসপাতাল অক্সিজেন নেই বা ফুরিয়ে আসছে জানিয়ে রোগী নিচ্ছে না।

করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এখন বাড়িতে বাড়িতে। হাসপাতালগুলোর এই পরিস্থিতি দেখে অনুজ তিওয়ারি ভাইকে বাঁচাতে অনেক টাকা দিয়ে একটি কনসেনট্রেটর কিনেছেন। এটি দিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেওয়া যায়। ডাক্তার তাকে রেমডিসিভির ওষুধ জোগাড় করতে বলেছেন। দোকানে ওষুধ না পেয়ে কালোবাজারের দ্বারস্থ হয়েছেন মি. তিওয়ারি।

প্রতিদিন অক্সিজেনের জন্য এসওএস নোটিস পাঠাচ্ছে অনেক হাসপাতাল। এমন বার্তার পর সরকার থেকে অক্সিজেন ট্যাংকার পাঠালেও একদিনের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

দিল্লির একজন ডাক্তার বলছেন, হাসপাতালগুলো এখন এভাবেই চলছে এবং যে কোনো সময় বড় কোনো ট্রাজেডি ঘটতে পারে বলে সত্যিকারের আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি শুধু অক্সিজেনের অভাবে দিল্লিতে মারা গেছে কয়েকজন কোভিড রোগী।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন