আর্কাইভ থেকে জাতীয়

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায় এখনও কার্যকর হয়নি

দেশে সবচেয়ে আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের হত্যাকান্ডের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলার রায় বাস্তবায়িত হয়নি। নিম্ন আদালতের পরে হাইকোর্টে দ্রুত রায় ঘোষণা করা হলেও আপিল বিভাগে রায়টি নিষ্পত্তি হতে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন নিহতদের স্বজনরা।

২৭ এপ্রিল ২০১৪, নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছ থেকে পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণ করেন র‌্যাবে-১১ এর কতিপয় বিপথগামী সদস্য। অপহরণে তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় সাত জনেরই মৃতদেহ।

এই ঘটনায় আরেক স্থানীয় কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করা হয়। অভিযোগ করা হয়, নূর হোসেন র‌্যাব সদস্যদের  বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে তাঁর প্রতিপক্ষকে র‌্যাব দিয়ে খুন করিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ মামলাটি তদন্ত করে।

সরকারের ‘এলিট বাহিনী’ বলে পরিচিত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের  বিপথগামী সদস্যরা সরাসরি এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়।

মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, কর্মকর্তা মেজর (অব) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব) এম এম রানাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার আরেক আসামি নূর হোসেন পালিয়ে ভারতে গেলেও সেখানে ধরা পড়েন।

দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা ছাড়াও ১২ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

বাংলাদেশের হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলার রায়ে কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং সাবেক র‍্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন। এই সাত খুনের মামলায় ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত।

তাদের মধ্যে ১৫জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। তাদেরকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে আরো দুইবছরের সাজা ভোগের নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

যাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে নয়জন নুর হোসেনের সহযোগী। ২০১৭ সালের ২৬শে জুলাই এই মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১৩ই আগস্ট দিন ধার্য করেন। কিন্তু আদালত পরে রায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে ২০১৭ সালে ২২শে আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাত খুন মামলাটি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনে সাত খুন মামলায় যে সাজাটি বহাল রেখেছেন সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসের কারণে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই এ মামলাটি এখন একই অবস্থায় রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন