আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

নন্দীগ্রামে কেন হারলেন মমতা

নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়েই পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসন হটিয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামেই এক সময়ের সহযোদ্ধা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। সার্ভার জটিলতায় ফল ঘোষণায় সমস্যা হলেও আসনটিতে জয় পেয়েছেন শুভেন্দুই।

পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে শুরুটা হয়েছিলো। ২০০৬ সালে টাটা কোম্পানিকে এক হাজার একর কৃষিজমি দিয়েছিল তখনকার শাসক দল সিপিএম। কিন্তু সেই জমি অধিগ্রহণ ঘিরে আন্দোলন শুরু করে শত শত কৃষক। তাদের সমর্থন দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। চাপে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে গুজরাতে কারাখানা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় টাটা।

২০০৭ সালে আবারো পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া শহরের কাছে নন্দীগ্রামে বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য শিল্পোঞ্চল স্থাপনের জন্য ১০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় বামশাসিত সরকার। জমির ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাস্তুচ্যুত হতে রাজি হয়নি চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল কৃষকরা। আবারো গড়ে ওঠে তুমুল আন্দোলন। ওই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিলেন মমতা।

রাজনৈতিক বিশ্লেকরা বলছে, নন্দীগ্রাম আন্দোলনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় বসায়। ২০১১ সালে তৃণমূলের হাতেই ধসে পড়ে ৩৪ বছরের বাম দূর্গ।

নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতার অন্যতম সঙ্গী ছিলেন তারই দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। কৃষক আন্দোলনে প্রভাবশালী সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তবে রাজনৈতিক নানা টানাপোড়েনে গেল ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়তে মমতাকে চ্যালেঞ্জ জানান তিনি। ৫০ হাজার ভোটে মমতাকে হারাবেন বলেও ঘোষণা করে দেন।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল বিজয়ের পর তৃণমূলের কয়েকজন নেতা যোগ দেয় পদ্ম শিবিরে। দলের অবস্থা যখন কিছুটা টালমাটাল সেসময়ই শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ নেন মমতা। নিজের ভবানীপুর আসন ছেড়ে প্রার্থী হন আলোচিত নন্দীগ্রামে। কিন্তু বিপত্তি বাধে সেখানে। ১০ মার্চ মনোনয়ন জমা দিয়ে একটি মন্দিরে পূজা দেওয়ার পর গাড়ি ওঠার সময় ভীড়ের মধ্যে আহত হন মমতা। অভিযোগ করেন, তাকে আহত করেছে বিজেপির সমর্থকরা।

পুরো নির্বাচনী প্রচারেই হুইলচেয়ারে বসে যোগ দেন মমতা। সমালোচনাও কম হয়নি। দল বড় জয় পাচ্ছে, জিতছেন মমতাও। এমন খবরে হেঁটেই রাজ্য সচিবালয়ে যান তৃণমূল নেত্রী। সমর্থকদের ধন্যবাদও দেন তিনি। তবে কিছুক্ষণ পরই নির্বাচন কমিশন জানায় নন্দীগ্রামে জিতেছেন শুভেন্দু, মমতা নয়। এ ঘটনায় ভোট লুটের অভিযোগ করে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেন মমতা।

ভোটে হেরে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী হতে সাংবিধানিক বাধা নেই মমতার। তবে দলের বিধায়কদের সমর্থনের পাশাপাশি ছয় মাসের মধ্যে একটি আসনে জিততে হবে তাকে।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন