বিজেপিতে ‘কুইন’ কঙ্গনা!
মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ‘কুইন’ কঙ্গনা। নানা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে তার বক্তব্যে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। তবে কঙ্গনা থামেননি। সেই কঙ্গনাই সম্প্রতি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার আভাস দিয়েছেন। এবার সেই বলিউড অভিনেত্রীকে বিজেপিতে স্বাগত জানালেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তবে শর্ত একটাই। সেটা হল, দলে যোগ দেয়ার আগে কোনও শর্ত দেয়া যাবে না।
২০২৪ লোকসভা ভোটে নিজের রাজ্য হিমাচল প্রদেশ থেকে ভোটে লড়ারও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন কঙ্গনা। একটি সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে এ নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডাকে।
কঙ্গনার বিজেপি যোগ দেয়ার ইচ্ছে নিয়ে কী ভাবছে বিজেপি? নড্ডা জানিয়ে দেন, যে কেউই বিজেপিতে স্বাগত। দলীয় অনুশাসন মেনে যারা রাজনীতি করতে ইচ্ছুক, তারা চাইলে বিজেপিতে আসতে পারেন।
এরপর অভিনেত্রীর নাম নিয়েই নড্ডা বলেন, কঙ্গনা রানাউতকে বিজেপিতে স্বাগত। কেউ কাজ করতে চাইলে বিজেপিতে তার জন্য বড় জায়গা আছে। তবে কোনও শর্ত দিয়ে বিজেপিতে আসা যায় না। এটাই তাদের দলের নিয়ম। টিকিট দেয়ার ব্যাপারে দলের তৃণমূল স্তর থেকে নির্বাচন কমিটি হয়ে সংসদীয় দলে আলোচনা হয়। তারপর নেয়া হয় সিদ্ধান্ত।
কঙ্গনার বিজেপিতে যোগ দেয়ার প্রশ্নে নড্ডা এ-ও বলেন, সবাইকে বিজেপিতে স্বাগত। কিন্তু কে কোথায় কাজ করবেন, সেটা ঠিক করবে দল।
বিজেপি-ঘনিষ্ঠ কঙ্গনা কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকলেও তিনি হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা। অন্য দিকে, নড্ডার জন্ম বিহারে হলেও শিকড় কিছু দিন আগে নিজের রাজ্য থেকে ভোটে লড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন কঙ্গনা। মণিকর্ণিকার পরিচালক এবং অভিনেত্রী কঙ্গনা বলেন, মানুষ চাইলে এবং বিজেপি টিকিট দিলে হিমাচলপ্রদেশের মান্ডি থেকে ভোটে লড়বেন তিনি।
কঙ্গনার বলিউডে আত্মপ্রকাশ অনুরাগ বসু পরিচালিত ‘গ্যাংস্টার’ ছবি দিয়ে। ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এর পর একের পর এক ছবি দিয়ে নিজের জাত চেনান কঙ্গনা। ‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘কুইন’-এর মতো ছবি করেছেন। দু’টি ছবিতেই অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৮ সালে ফ্যাশন সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পান জাতীয় পুরস্কার।
তবে শক্তিশালী অভিনেত্রী কঙ্গনার ছবি যেমন হিট ততোধিক হিট তাকে নিয়ে একের পর এক বিতর্ক। সিনে দুনিয়ার কেউ হোক কিংবা রাজনীতি, কারও সম্পর্কে দুমদাম বলে দিতে দু’বার ভাবেন না এই অভিনেত্রী।
করণ জোহরের বিরুদ্ধে নেপোটিজমের অভিযোগ করেন কঙ্গনা। ঋত্বিক রোশন তাকে দীর্ঘ মেল করে জ্বালাতন করতেন বলে অভিযোগ করেছেন। সে নিয়ে জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আবার সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকাল মৃত্যুর পর বলিউডের ‘প্রভাবশালী’দের দায়ী করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কঙ্গনা।
সেই অভিনেত্রীই আবার বিজেপির একনিষ্ঠ সমর্থক। আরও পরিষ্কার করে বললে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমর্থক তিনি। সেই কঙ্গনার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভেদ ছড়ানোর অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে। সুশান্ত সিংহ রাজপুত মৃত্যু মামলায় মুম্বাই পুলিশের বিরুদ্ধে মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করার অভিযোগেও কঙ্গনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় আদালতে। যা নিয়ে তৎকালীন উদ্ধব ঠাকরে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন কঙ্গনা। আবার পর ক্ষণেই জানান, সাভারকরের মতো জেলে যেতে রাজি তিনি।
পরে সেই মণিকর্ণিকা অভিনেত্রীকে ওয়াই প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিয়েছে মোদী সরকার। যদিও এক জন অভিনেত্রীকে কেন ওয়াই প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে, এ নিয়ে বিজেপি সরকারকে একহাত নেয় বিরোধীরা।
কখনও মুম্বইকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর, কখনও মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে বিতর্ক এবং আইনি প্যাঁচে পড়েছেন কঙ্গনা। তবে তিনি থামেননি। কঙ্গনার নিজের কথায়, ‘‘আমি ছোট থেকে একরোখা।’’
বার বার টুইটারে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট করায় কঙ্গনাকে নিষিদ্ধ করে দেয় মাইক্রোব্লগিং সাইট। গেলো মে মাসে টুইটার থেকে ‘নির্বাসিত’ হয়ে অন্যান্য সমাজমাধ্যমে সোচ্চার হন টুইটার।
১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭২তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান কঙ্গনা। শুভেচ্ছাবার্তা ছিল মোদী-বন্দনায় ভরপুর। কঙ্গনা জানিয়ে দেন, মোদীই এই গ্রহের সবচেয়ে প্রভাবশালী পুরুষ। শুধু তাই নয়, কঙ্গনার কথায়, ‘রাম, কৃষ্ণ, গান্ধীর মতো মোদীও অমর হয়ে থাকবেন।’ মোদীকে ‘অবতার’। তাই মোদীর দলে কঙ্গনা যোগ দেবেন, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই।
কঙ্গনার নতুন ছবির নাম ‘এমার্জেন্সি’। ছবিতে ভারতের প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন কঙ্গনা। ছবিতে রয়েছেন অনুপম খের। তিনি জেপি নারায়ণের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করছেন মহিমা চৌধুরি, শ্রেয়স তালপাড়ে, মিলিন্দ সোমন। ‘এমার্জেন্সি’ চিত্রনাট্য লিখেছেন এবং পরিচালনা করেছেন কঙ্গনা।
তবে ছবির দুনিয়া ছেড়ে এখনই পুরোপুরি রাজনীতি নয় বলে জানাচ্ছেন কঙ্গনা। এরমধ্যেই তার রাজনীতিতে যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে নিজেই জানান কঙ্গনা। তবে তার ‘শর্ত’ নিজের বাসস্থান যেখানে, সেখান থেকে লোকসভা ভোটে লড়বেন। হিমাচল প্রদেশে বিজেপির হয়ে প্রচারে দেখা যাবে কি? তা পরিষ্কার করেননি কঙ্গনা।
হিমাচলে এখন ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। মোদী-ম্যাজিক কাজ করেছে বলে দাবি করেছেন জেপি নড্ডা। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর সবার আস্থা আছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে আবার হিমাচলের মানুষ বিজেপিকেই বেছে নেবেন।
বস্তুত, আগামী নভেম্বরেই রয়েছে হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচন এক দফায় অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের ভোটগ্রহণ ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। 8 ডিসেম্বর হবে ভোট গণনা।
পঞ্জাব জয়ের পর এ বার হিমাচল প্রদেশ জয়ের লক্ষ্যে ৬৮টি আসনেই লড়বে বলে ঘোষণা করেছে আম আদমি পার্টি। তবে তাতে তাদের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছে বিজেপি।
হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী জয় রাম ঠাকুরের দাবি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হিমাচলে সবক’টি আসনেই বিজেপি জিতবে। তবে এ বারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেসের মধ্যে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। নড্ডা বলছেন, আশঙ্কার কারণ নেই। তাদের দলই থাকবে।