বিবিএ শিক্ষার্থী তৈরি করলেন দুই অ্যাপ
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়ে ‘গুগল ট্রান্সলেটর ও অক্সফোর্ড থ্রি থাউজ্যান্ড ভোকাবুলারি ডিকশনারি’ অ্যাপস তৈরি করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম। এতে ক্যাম্পাস জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি। এর মধ্যে গুগল ট্রান্সলেটর অ্যাপসটি মোবাইল ডাটা ছাড়াই যেকোনো শব্দ ট্রান্সলেট করে দিতে পারে। গুগল ট্রান্সলেটর অ্যাপসটি গুগল প্লে স্টোর থেকে এক মাসে ৫০,০০০ বার ডাউনলোড করা হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো ভাষায় অনুবাদ করা যাবে এই অ্যাপসটি দিয়ে।
অ্যাপটির নাম ট্রান্সলেটর স্টুডিও: অফলাইন (Translator Studio: Offline)। এরই মধ্যে অ্যাপে যুক্ত হয়েছে নানা ফিচার। এখানে নেই কোনো বাক্যের সীমাবদ্ধতা। টেক্সযুক্ত ইমেজকে টেক্স এ কনভার্ট করা যাবে এবং সেটাকে যেকোনো ভাষায় অনুবাদ করা যাবে। আবার ভয়েস অনুবাদও করা যাবে।
এছাড়া সব ভাষার প্রতিটি শব্দের সঠিক উচ্চারণ জানা যাবে। অনুবাদ করা টেক্সগুলো হিস্ট্রি সেকশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা থাকবে এবং সেটা চাইলে পরবর্তীতে মুছে ফেলা যাবে
আশরাফুল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রাশাসন অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার আটলা গ্রামে। আশরাফুল ইসলামের পিতা পেশায় কাঠমিস্ত্রী আর মা গৃহিণী।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি এই অ্যাপস তৈরির আগে একটা বই লিখেছিলাম। বই লেখা যখন শেষ হয়েছিল তখন করোনার সময় ছিল। ফেসবুক, বই পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। বই প্রকাশ হতে সময় লাগে।
একদিন ফেসবুক ব্যবহার করার সময় হঠাৎ ভাবলাম এই যে ফেসবুক থেকে শুরু করে গুগল প্লে স্টোরে যত অ্যাপস আছে এগুলো কোনো না কোনো মানুষ বানিয়েছে। এগুলো কিভাবে বানায়, কারা এখানে আসতে পারে, কারা এখানে আসতে পারে না। তখন আমার প্রশ্ন ছিল আমি পারব কি না?। এটা নিয়ে আমাকে ৬ মাস গবেষণা করতে হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও আমার ৬ মাস সময় লেগেছে সিদ্ধান্ত নিতে যে আমি পারব। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের তাকবির ভাই ও শরীফ ভাই আমাকে বিভিন্নভাবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, আমি প্রথমে ইউটিউবে অ্যাপস তৈরি সম্পর্কিত অনেক ভিডিও দেখি। আমি চেষ্টা করছিলাম বাংলাতে কেউ গুগল ট্রান্সলেট করতে পারে কি না। কারণ যেহেতু আমি শিক্ষানবিশ সেহেতু আমার জন্য কষ্ট হয়ে যাবে যদি ইংরেজিতে করতে যাই। পরবর্তীতে "বঙ্গো" প্লাটফর্মের নাম শুনলাম। সেখান থেকে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গেলাম। এভাবেই আমি কাজ শুরু করলাম।
আশরাফুল বলেন, এই অ্যাপস তৈরির আগে আমি অক্সফোর্ড থ্রি থাউজ্যান্ড ভোকাবুলারি ডিকশনারি একটি অ্যাপস তৈরি করি। এখানে অক্সফোর্ডে রিসার্চ করা ৩০০০ ভোকাবুলারি রয়েছে। মূলত আমরা ইংরেজিতে কথা বলার সময় বা লেখার সময় ডিকশনারিতে থাকা সবধরনের শব্দ আমরা ব্যবহার করতে পারি না। দৈনন্দিন জীবনে আমরা সচারাচর যে শব্দগুলো ব্যবহার করি সেগুলো আমি বাংলা অর্থ ও উচ্চারণসহ এই অ্যাপসটি তৈরি করি।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন ডিকশনারি অ্যাপসটি তৈরি করলাম। তখন আমি একদিন কম্পিউটার দোকানে একজনকে বিনয়ের সাথে বললাম, ভাই আমার একটা অ্যাপস আছে আপনি একটু ডাউনলোড করবেন?। তারপর উনি বললেন তোমার এই অ্যাপস দিয়ে তো শুধু শব্দগুলো দেখা যায়। এটা দিয়ে কি ট্রান্সলেট করা যায়? তারপর থেকেই আমি এই 'গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপস' তৈরির সিদ্ধান্ত নিই।
আশরাফুল বলেন, যেহেতু আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র না সেক্ষেত্রে আমাকে অনেক বেশি গবেষণা করতে হয়েছে। তারপরে আছে ধৈর্যের বিষয়টি। কারণ কোডিং সম্পর্কিত যে কাজগুলো আছে এই কাজগুলো করার সময় ধৈর্য ধরতে হবে। এই ধৈর্যগুলোই হলো সফলতার পন্থা।
তিনিবলেন, আমি যদি সঠিক গাইডলাইন ও কোনো ফান্ড পাই তাহলে বিশ্বব্যাপী যে অ্যাপসগুলোর চাহিদা আছে সেগুলো আমি তৈরি করতে সক্ষম হব। এছাড়া যদি কোনো কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করতে পারি তাহলে আমার জন্য সুবিধা হবে।
উল্লেখ্য, অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে Translator Studio: Offline লিখে সার্চ করে ডাউনলোড করা যাবে।