আর্কাইভ থেকে আইন-বিচার

সগিরা মোর্শেদ মামলায় সাক্ষ্য নিতে বাধা নেই ৫ বছরের শিশুর

৩৩ বছর আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় নিহতের মেয়ের সাক্ষ্য নিয়ে আপত্তি তুলেছিল আসামিপক্ষ। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশের পর এ মামলার নথি খুঁজে পেয়েছেন হাইকোর্ট। আর তাই এবার ৫ বছরের শিশুর সাক্ষ্য নিতে বাধা নেই।

সগিরা মোর্শেদ ছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিসের গবেষক,৩৩ বছর আগে খুন হয়েছিলেন তিনি । সেই খুনের মামলার বিচার বন্ধ ছিল ৩০ বছর। পিবিআইয়ের অধিকতর তদন্তের ভিত্তিতে দুই বছর আগে নতুন করে বিচার শুরু হয় চাঞ্চল্যকর এই খুনের।

নিম্ন আদালতে সেই খুনের মামলার বিচার আবারও চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দুই আসামির আবেদনে। যে আবেদনে ভিকটিম সগিরা মোর্শেদের মেয়ের সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আর্জি জানানো হয়েছে হাইকোর্টে।

হাইকোর্টে আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ বন্ধের আর্জি দেয় আসামি পক্ষ। আবেদনের ওপর হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য আসামি পক্ষকে সময় দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনাল থেকে। কিন্তু আসামি পক্ষ আজ অবধি হাইকোর্টের কোন আদেশ দাখিল করতে পারেনি।

যদিও ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে দুই আসামির করা আবেদনটি গেলো চার মাসে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ফৌজদারি শাখা থেকে ফাইল না আসায় হয়নি শুনানি। শুনানির সময় ফাইল না পাওয়ায় এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। পরে আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিরা।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে খুন হন। তখন মিন্টু নামে এক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের আদেশ দিলে আসামি মারুফ রেজার আবেদনে ১৯৯১ সাল থেকে হাইকোর্টের আদেশে মামলার বিচার কাজ বন্ধ ছিল ৩০ বছর। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ। অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্স (পিবিআই)।

ওই তদন্তে সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজাকে (৫৯) অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। এই চার আসামিই আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনায় দায় স্বীকার করে নেন।

চার্জশিটে বলা হয়, স্বজনদের পরিকল্পনাতেই খুনের শিকার হন ওই নারী। আর সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে খুন করেন মারুফ রেজা। ইতিমধ্যে জামিনে আছেন এই হত্যা মামলার দুই আসামি হাসান আলী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন।

সগিরা মোর্শেদের মেয়ের সাক্ষ্যগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ:

২০২০ সালের ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। অভিযোগ গঠনের পর দশ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের দশ নম্বর সাক্ষী হলেন সগিরা মোর্শেদের মেয়ে সামিয়া সারওয়াত চৌধুরী। গত জুন মাসে তার আংশিক জবানবন্দি রেকর্ড করে ট্রাইব্যুনাল। এরপরই সামিয়ার সাক্ষ্যগ্রহণ না করার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন দেয় তার চাচা ও চাচি ডা. হাসান আলী ও সায়েদাতুল মাহমুদ শাহীন।

আবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় সামিয়ার বয়স ছিল ৫ বছর। কিন্তু এখন তার বয়স ৩২ বছর। সাক্ষ্য নেওয়া হলে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন না। আসামিদের এই আবেদন খারিজ করে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারক রফিকুল ইসলাম তার আদেশে বলেন, সাক্ষ্য আইনের ১১৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের এই আবেদন মঞ্জুরের কোন যুক্তিসংগত কারণ নাই।

ট্রাইব্যুনালের এই আদেশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন মামলা করেন। ওই রিভিশনে সগিরা খুনের মামলার নথি তলবের পাশাপাশি বিচার কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়। গত ২১ জুলাই এই রিভিশন আবেদন শুনানির জন্য বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের দ্বৈত বেঞ্চের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য অন্তর্ভূক্ত হয়। ছয় কার্যদিবস মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল।

কিন্তু গত ৩১ জুলাই ও ১০ আগস্ট মামলাটি শুনানির জন্য ডাকা হলেও সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে ফাইল না থাকায় শুনানি হয়নি। পরে সেখান থেকে আবেদনটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবেদনটি শুনানির জন্য নেওয়া হয় বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে। গত ২৩ আগস্ট ওই বেঞ্চের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় আবেদনটি। পাঁচ কার্যদিবস ধরে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। সর্বশেষ গত পহেলা নভেম্বর শুনানির জন্য ডাকা হলে ফাইল না পাওয়ায় আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন হাইকোর্ট।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন