আর্কাইভ থেকে জাতীয়

জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ নারী উদ্বার, ৩জন গ্রেপ্তার

দেশের একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সে কেবিন ক্রু হিসেবে চাকরি করতেন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। পরিবারসহ থাকতেন নারায়ণগঞ্জে। এমিলির ছেলে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানের (১৫) গৃহশিক্ষক ছিলেন আল আমিন। সেই শিক্ষকের মাধ্যমেই এমিলি ও রিয়াসাদ নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’তে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এরই মধ্যে এমিলিকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এছাড়াও নতুন জঙ্গি সংগঠনটির এর অন্যতম দুই অর্থদাতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খন্দকার মঈন জানান, আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ এমিলিকে পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এছাড়া গতকাল রাতে র‌্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী আব্দুল হাদি সুমন ওরফে জন, আবু সাঈদ শের মোহাম্মদ এবং রনি মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে তিনটি উগ্রবাদী বই, নয়টি লিফলেট এবং দুটি ব্যাগ।

জঙ্গিবাদে

মঈন জানান, গেলো মার্চে নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ান নামের এক তরুণ নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু তখনো তিনি স্ত্রী-সন্তানের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানতেন না। গেলো ৩ নভেম্বর র‌্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মহিলা শাখা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। এসময় পুলিশের এই এলিট ফোর্স জানতে পারে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং তার সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে হিজরতে (পাহাড়ে) পাঠিয়েছেন। পরে র‌্যাব নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকা প্রকাশ করলে রাইয়ানের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এরপর গেলো ৫ নভেম্বর এমিলিকে উদ্ধার করার পর চারদিন ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় রাখা হয়।

উদ্ধারের পর এমিলি র‌্যাবকে জানান, তিনি ও তার ছেলে গৃহশিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরুর দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে রাইয়ান ২০২২ সালের মার্চে শিক্ষক আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়িতে ফিরেননি। গেলো সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আল আমিনের নির্দেশনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রনি মিয়া পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য রাইয়ানকে বান্দরবানে দিয়ে আসেন। তবে এমিলির ছেলে রাইয়ান এখনো নিরুদ্দেশ।

কমান্ডার মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‌'জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' গোপন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাহাড় সবচেয়ে নিরাপদ মনে করে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়ানো সহজ। গহিন বনে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অভিযান চালানোও কষ্টসাধ্য।

তিনি বলেন, নিখোঁজ ৫৫ কিশোর-তরুণের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের কেউ পরিবারকে বলেছে বিদেশে চাকরি হয়েছে, আবার কেউ বলেছে অন্য জেলায় চাকরি হয়েছে। এমন ধরনের সব কথা বলে মাঝে মাঝে তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করে।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা তাদের হিজরতের কৌশল সম্পর্কে বলেছে। কীভাবে তারা হিজরত করে, আসলে তারা কী কী জিনিস বহন করতে পারবে, কোন বিষয়গুলো তাদের সঙ্গে থাকা উচিত ইত্যাদি। আত্মগোপনে যাওয়া কিশোর ও তরুণরা অনেকেই সামরিক কলাকৌশল ও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

জঙ্গিবাদেনিখোঁজদের সন্ধানে পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশে এবং দেশের বাইরে তাদের চাকরি হয়েছে - এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন তারা।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন