আর্কাইভ থেকে এশিয়া

মন্থর হয়ে আসছে চীনের বিক্ষোভ 

চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিধি-নিষেধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে গেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে করে দেশটির সাংহাই ও বেইজিংয়ে গত কয়েক দিনের তুলনায় বিক্ষোভ কিছুটা মন্থর হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের কাছে ফোনকল যাচ্ছে। পুলিশ পরিচয়ে তাদের কাছে ফোন যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। কীভাবে পুলিশ তাদের পরিচয় জানতে পারল তা স্পষ্ট নয়।

চীনের বেজিং সাংহাই ও উহানের মতো বেশ কিছু শহরে হওয়া ওই বিক্ষোভে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। এসব বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেয়া হয় – যা চীনে অত্যন্ত বিরল ঘটনা।

বিক্ষোভের অবসান ঘটাতে চীনা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।

দেশটির শহরগুলোতে পুলিশ উপস্থিতি অনেকগুণ বেড়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়েছে যেন তারা আইন না ভাঙে।

বিক্ষোভ এর মধ্যেই স্তিমিত হয়ে আসছে। সোমবার (২৮ নভেম্বর) বেজিংয়ে যে বিক্ষোভ হবার কথা ছিলো – তার সমাবেশস্থলটি পুলিশ ঘিরে রাখার কারণে হতে পারেনি।

সাংহাই শহরে বিক্ষোভকারীদের ব্যবহৃত প্রধান সড়কটির পাশে  বড় বড় প্রতিবন্ধক বসানো হয়।

চীন

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে বেজিং এবং সাংহাই শহরের এমন কিছু জায়গায় পুলিশকে টহল দিতে দেখা যায় যেখানে টেলিগ্রাম -অ্যাপভিত্তিক কিছু গ্রুপ লোকজনকে জড়ো হবার আহ্বান জানিয়েছিল।

সোমবার রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় হাংজু শহরে একটি ছোট আকারের বিক্ষোভ শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে থামিয়ে দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।

খবরে বলা হয়, পুলিশ অনেক লোকের ফোন পরীক্ষা করে দেখছে যে সেখানে ভিপিএন আছে কিনা, টেলিগ্রাম বা টুইটারের মতো অ্যাপ আছে কিনা – যা চীনে নিষিদ্ধ।

গত দু’দিনে বেশ কিছু লোককে  আটকও করা হয়- যার মধ্যে এমন লোকও আছেন যারা রাস্তায় ছবি তোলার জন্য থেমেছিলেন।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন নারী বলেছেন – বেজিংয়ে একটি বিক্ষোভে যোগ দেবার পর তিনি ও তার পাঁচ বন্ধু পুলিশের ফোন পেয়েছেন। তাদের একজন ফোন না ধরায় পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেয় যে তিনি তাদের ভাষায় “অবৈধ সমাবেশে” গিয়েছিলেন কিনা ।

আরেক জন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাদের কয়েকজনকে একটি থানায় গিয়ে “রোববার রাতে তারা কী কী করেছেন” তার একটি লিখিত বিবৃতি জমা দিতে বলা হয়েছে।

বেজিং-এর একজন বিক্ষোভকারী বলেছেন, তারা মরিয়া হয়ে তাদের ‘ইন্টারনেট চ্যাট হিস্ট্রি’ মুছে ফেলছেন।

চীনা সরকারের একজন মুখপাত্র এই বিক্ষোভের জন্য এমন কিছু শক্তিকে দায়ী করেন যাদের অসাধু উদ্দেশ্য ছিলো – তবে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আইনের শাসনের ব্যাপারে দেশটির অবস্থান একক এবং নাগরিকদের সব অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত, তবে সেগুলো অবশ্যই আইনের কাঠামোর মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।

গত সপ্তাহান্তে দেশটির বেশ ক’টি শহরে বিক্ষোভের ওপর চীনা নেতৃত্বের দিকে থেকে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর বিবৃতি।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) পশ্চিম চীনের উরুমচিতে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ১০ জনের মৃত্যুর পর এ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। অনেক চীনাই মনে করেন, করোনার বিধি-নিষেধ না থাকলে এ মৃত্যু এড়ানো যেতো। তবে কর্তৃপক্ষ একথা অস্বীকার করছে।

একজন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে এ বিক্ষোভের কারণে 'জিরো কোভিড' নীতিতে পরিবর্তন আনা হবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন,  চীন এসব বিধি-নিষেধে পরিমার্জন-পরিবর্তন অব্যাহত রাখবে।

চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দেশের টিকাদান কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করার ঘোষণা করেছেন এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকাদানের ওপর জোর দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের এলাকায় কোভিড-১৯-এর উপস্থিতি শনাক্ত হওয়া মাত্রই কঠোর লকডাউন আরোপ করার সুপারিশ করেছে।

চীনে গত তিন বছর ধরে একের পর এক লকডাউন এবং গণহারে কোভিড পরীক্ষার জেরে মানুষের ধৈর্য সহ্যের চরম সীমায় পৌঁছেছে। সাংহাই এবং রাজধানী বেইজিংয়ের মত বড় বড় শহরে গত ক’দিনের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন