আর্কাইভ থেকে ফুটবল

বুনুর দস্তানায় মরক্কোর ইতিহাস রচনা

এবারের কাতার বিশ্বকাপের একমাত্র আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো মরক্কো। ১২০ মিনিট গোলশূন্য খেলা শেষে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে আফ্রিকান সিংহরা। পেনাল্টি শুটআউটে মরক্কোর গোলরক্ষক বুনু ইয়াসিনের অসাধারণ দক্ষতায় ৩টি শট নিয়ে একটিতে গোল করতে পারেনি স্পেন।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচটির নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে জিতেছে মরক্কো।

কোস্টারিকাকে সাত গোল দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল স্পেন। এরপর আর সেই স্পেনকে পাওয়া যায়নি। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই শেষে ড্র, এরপর জাপানের বিপক্ষে বসল হেরেই। সেই স্পেন আজকের ম্যাচের শুরুতেই ৭০ শতাংশের কাছাকাছি সময় নিয়ে রেখেছিল বলের নিয়ন্ত্রণ। বল দখল মোটে ২০ ভাগের একটু বেশি হলেও মরক্কোর ফুটবলাররা বিভ্রান্ত হননি।  যথেষ্ট পরিণত ফুটবলই খেলেছেন দলটি।

ম্যাচের প্রথম ১০-১৫ মিনিট যেভাবে খেলেছে আফ্রিকান দেশ মরক্কো, তাতে মনে হচ্ছিল স্পেন তাদের সামনে পাত্তাই পাবে না; কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় স্পেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। গোলই আদায় করতে পারেনি। একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও গোলের দেখা পায়নি মরক্কো। পরিসংখ্যান টেবিলের দিকে তাকালে দেখা যাবে, মাত্র ৩১ ভাগ ছিল মরক্কোর দখলে বল। ৬৯ ভাগ ছিল স্পেনের তখলে। কিন্তু গোলের জন্য সঠিক একটি বল তৈরি করতে পারেনি স্প্যানিশরা। ম্যাচের ২৫ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল স্পেনের ফেরান তোরেস। তার নেওয়া শট মরোক্কোর গোলরক্ষক বুনু ধরতে পারেননি। কিন্তু বল গিয়ে বারে লেগে ফিরে আসে। যদিও সেটাতে আবার শট নেন দানি আলমো। কিন্তু ততক্ষণে অফসাইডের বাঁশি বাজায় রেফারি।

ম্যাচের ৩৩ মিনিটে মরোক্কোর মাজরাউই বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন। তার নেয়া শট সরাসরি স্পেনের গোলরক্ষক ইউনাই সিমনের কাছে যায়। তিনি সেটা রুখে দেন। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ০-০ গোল নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতি থেকে ফিরে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফেরান তোরেস। কিন্তু তার নেয়া শট ডানকোণা থেকে ধরে ফেলেন মরোক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু। ম্যাচের ৮২ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন স্পেনের আলভারো মোরাতা। কিন্তু সেই সুযোগেও গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় স্পেন।

৮৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। আচরাফ হাকিমির ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে ওয়ালিদ ছেদেরিয়া বল পেয়ে কোনোরকমে ডান পায়ে শট নেন। কিন্তু সেই শট থেকে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় তারা।

মরক্কোর চতুর্থ শট নিতে আসা আশরাফ হাকিমি লক্ষ্যভেদ করেন ঠিকই। আফ্রিকান দলটির জয় নিশ্চিত হয়ে যায় তখন। গ্যালারির মতো মাঠের লড়াইয়েও টিকে যায় মরক্কোর ‘লাল উৎসব’। ওদিকে স্পেন ডোবে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়ার বিষাদে।

বিশ্বকাপে এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রইল মরক্কো। আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে এতদিন এই কীর্তি ছিল কেবল ক্যামেরুনের, ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ বিশ্বকাপের মধ্যে।

মরক্কোর কীর্তি গড়া হয়ে গেছে আরও একটি। ক্যামেরুন (১৯৯০), সেনেগাল (২০০২) ও ঘানার (২০১০) পর চতুর্থ আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল তারা।

আর স্পেনের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হলো আরও। ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর কখনও বিশ্ব মঞ্চে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। ২০১৪ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর টানা দুই আসরে তাদের পথচলা থেমে গেল শেষ ষোলোয়। ২০১৮ আসরেও স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরেছিল দলটি।

চমক ধরে রাখতে পর্তুগালের বিপক্ষে শেষ আটের ম্যাচেও বুনুর জাদুর প্রয়োজন হবে মরক্কোর।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন