আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে: পরীমনি

চিত্রনায়িকা পরীমনি বলেছেন, আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। আমি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরীমনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমি সঠিক বিচার পাবো। পুলিশ খুবই বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। 

তিনি আরো বলেন, এতোটা তাড়াতাড়ি ম্যাজিকের মতো পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখলাম অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস সঠিক বিচার পাবো। 

পরীমনি বলেন, আমি এখন রিফ্রেশড। আমি কাজ করার শক্তি পেয়েছি। তারা (ডিবি কর্মকর্তারা) আমাকে অনেক সাহস যুগিয়েছেন।

আইজিপির সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, আমি আইজিপির কাছে বক্তব্য পৌঁছাতে পারিনি বলেই এত কথা। তিনি আমার একমাত্র ভরসাস্থল ছিলেন। তার কান পর্যন্ত আমার বার্তা পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম যে শিল্পী সমিতির হয়ে আমি আইজিপি বেনজীর স্যারের সঙ্গে একটু বসতে চাই, কথা বলতে চাই। তুমি (জায়েদ) একটু সহযোগিতা করো। তার জবাবে জায়েদ বলেছিলেন, ‘সরাসরি তুমি আসলে বেনজীর স্যারের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে পারব।’

এর আগে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদের কার্যালয়ে যান চিত্রনায়িকা পরীমনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী ও কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমি। 

ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার আগে পরীমনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মামলার বাদী হিসেবে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাকে ডাকা হয়েছে। পুলিশ আমার বক্তব্য শুনতে চায়।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার সাভার থানায় পরীমনি বাদী হয়ে উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজন গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার এ মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৮ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় পরীমনি তার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তাকে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করে। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি পরীমনিকে অনুরোধ করে, এখানে পরিবেশ সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। তারপর পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করে। 

টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। তখন পরীমনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। 

এসময় মদ্যপান করতে না চাইলে আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ জোর করে পরীমনির মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে পরীমনি সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পান। তখন আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরীমনিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এমনকি পরীমনির শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং তাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে পরীমনির গায়ে ছুড়ে মারে। তখন তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি আসামি নাসিরকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে। 

এ সময় পরীমনি ৯৯৯–এ কল করতে গেলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়া হয়। আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি নাসিরকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।

মামলার অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামি অমি পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরীমনির বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামির সহায়তায় আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন পরীমনি তার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পান। এরপর আনুমানিক রাত তিনটার সময় পরীমনি তার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় ফিরে যান।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে পরীমনিকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। ওই বিষয়ে তার পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

উল্লেখ্য, নাসির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপার ব্যবসায়ে আছেন। ১০ বছর ধরে মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্সের আগে তিনি মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের এমডি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান সরকারের গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি-বেসরকারি নানা ঠিকাদারি কাজ করেন।

নাসির ইউ মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার ৯ম কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।  

গত ৯ জুন (বুধবার) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন পরীমনি। রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। পরে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ ঘটনায় মামলা করেন তিনি। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন