‘পাঠান’ নিয়ে ঘোর বিরোধিতা জায়েদের
বেশ কিছুদিন থেকেই বিনোদন দুনিয়া মেতে আছে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ ছবি নিয়ে। বুধবার ১০০টি দেশে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। বাংলাদেশেও চলছে এ ছবি মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি।
দেশের প্রেক্ষাগৃহে এ সিনেমা দেখানোর বিরোধিতা করছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তার দাবি, দেশের প্রেক্ষাগৃহে যদি ‘পাঠান’ চালানো হয়, তবে ভারতে তার ছবি মুক্তি দিতে হবে!
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমন দাবির কথা জানান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুই বারের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তার আশঙ্কা, এতে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের সিনেমা কেবল গুটি গুটি পা পা করে আগাচ্ছে। পরাণ, হাওয়ার মতো সিনেমাগুলো নতুন প্রজন্মের দর্শকদের হলে টানছে। এ অবস্থায় হিন্দি ছবি মুক্তি দিলে দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।”
প্রতিবেশী দেশ নেপালের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “নেপাল পরীক্ষামূলকভাবে হিন্দি ছবি মুক্তি দিয়েছিল। তারপর তাদের সিনেমা দর্শক হারিয়েছিল। পরে বাধ্য হয়ে হিন্দি ছবি বন্ধ করতে হয়েছে। আমাদের অবস্থাও হবে নেপালের মতো। চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। হাজার হাজার শিল্পী বেকার হয়ে যাবে।”
এ চিত্রনায়কের মতে, বলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার সক্ষমতা এখনও অর্জন করেনি ঢালিউড। ফলে এখন ভারতীয় সিনেমা আমদানির সুযোগ দেয়া হবে আত্মঘাতী।
[caption id="attachment_62238" align="alignnone" width="1024"] জায়েদ খান[/caption]
জায়েদ খান বলেন, ‘ওদের বড় ইন্ডাস্ট্রি। একশ কোটি টাকা বাজেটে সিনেমা বানায়। আমাদের সিনেমার বাজেট থাকে এক কোটি টাকা। এক কোটি টাকা বাজেটের সিনেমা কখনোই একশ কোটির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারবে না। বাংলা ছবি তখন কেউ দেখবে না। আমাদের দেশের সিনেমা সাঁতাও মুক্তি পাবে। একজন পরিচালক গাঁটের টাকা খরচ করে কত কষ্টে সিনেমাটা বানিয়েছেন। এখন যদি পাঠান মুক্তি পায়, সাঁতাও কোথায় যাবে?’
তিনি বলেন, ‘ডিশের সহজলভ্যতার কারণে টেলিভিশনের বাজার পুরোপুরি ভারতীয় সিরিয়ালের দখলে চলে গেছে। হিন্দি ছবি দেশে আনলে হলের বাজারও ওদের দখলে চলে যাবে। আমাদের শিল্পীরা কাজ পাবে না। না খেয়ে মরবে। সে অবস্থা আমি কোনোভাবেই দেখতে চাই না। ফলে শুরু থেকে যেমন হিন্দি ছবি আনার বিরুদ্ধে ছিলাম, এখনও বিরুদ্ধেই আছি। আমি কোনোভাবেই হিন্দি ছবি আনার পক্ষে না।’
যদিও দেশে হিন্দি ছবি মুক্তিতে আপত্তি নেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির। উচ্চ আদালতের রায়ে এ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসা অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার তো এরইমধ্যে একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে ‘পাঠান’মুক্তি দেওয়া যেতে পারে, তবে লাভের ১০ শতাংশ শিল্পী সমিতিকে দিতে হবে।
এছাড়া দেশে হিন্দি ছবি চালানোর পক্ষে মত দিয়েছে পরিচালক এবং প্রযোজক সমিতিও। পরিচালক সমিতির নতুন সভাপতি কাজী হায়াত বলেছেন, সিনেমা হল বাঁচাতে দেশে হিন্দি ছবি মুক্তি দিলে ক্ষতি নেই। আবার জায়েদ খানের মতো অনেকে মনে করছেন, এতে দেশীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি মুখ থুবড়ে পড়বে।
[caption id="attachment_83620" align="alignnone" width="1024"] ‘পাঠান’[/caption]
অন্যদিক সিনেমা হলগুলোর মালিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সিনেমা দেখানোর তদ্বির করে আসছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সম্মত হলে সরকারের আপত্তি নেই।
এর মধ্যেই চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস ‘সাফটা’ চুক্তির আওতায় শাহরুখ খানের সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি দেয়ার কথা বলেছেন।
সাফটা চুক্তির আওতায় হিন্দি সিনেমা আমদানি হলে বাংলাদেশের সিনেমাও ভারতে সমানভাবে দেখানোর দাবি জানান জায়েদ খান।
তিনি বলেন, ‘সাফটা চুক্তির আওতায় ছবি যদি আনতেই হয়; আমাদের ছবিও যথাযথভাবে ভারতে চালাতে হবে। আমাদের ছবি নিয়ে নামে মাত্র একটা-দুইটা হল দিয়ে ওরা আমাদের হল দখল করে নেবে, তা হবে না।’