আর্কাইভ থেকে অপরাধ

ট্রাফিক পুলিশকে ভর্ৎসনা করে লাইভ, সেই ভুয়া সাংবাদিক গ্রেপ্তার

সিলেটে আইন অমান্য করায় মোটরসাইকেল আটকের পর ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি-ধামকি দিয়ে ফেসবুকে লাইভের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই সাংবাদিক পরিচয়ধারী ফয়ছল কাদিরকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৯।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিলেট মহানগরের পীরের বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক ভুয়া সাংবাদিক ফয়সল কাদির (৩৯) ফেসবুকভিত্তিক পিকে টিভির (পৃথিবীর কথা টিভি) ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও মাতৃজগত নামে একটি পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

র‍্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সামিউল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে গত ১১ জুলাই রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া বাদি হয়ে ফয়ছল কাদির (৪০) নামে ওই ভুয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরাসরি প্রচার করে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত ৯ জুলাই সিলেট মহানগরের সুরমা গেট এলাকায় সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে তিনজনকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালানোয় কথিত সাংবাদিক ফয়সল কাদিরের মোটরসাইকেল আটকান সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া। এ সময় ওই গাড়ির কোনো কাগজপত্র ও নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি ফয়সল। এরপর ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরসাইকেলটির বিরুদ্ধে মামলা দিলে পুলিশকে হুমকি-ধমকিসহ নানা অপপ্রচার চালিয়ে ‘পিকে টিভি’ নামে ফেসবুক পেজে লাইভ করে ফয়সল কাদির। যা কয়েকঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে ওই সাংবাদিক।

এদিকে ফেসবুক লাইভের কমেন্টেই অনেকে ফয়সল কাদিরের আচরণের নিন্দা করেছেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, ক্ষমতা প্রদর্শনের নিন্দা করেন মন্তব্যকারীরা। একই সঙ্গে প্রশংসিত হয় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আচরণ।

১১ জুলাই রাতে ফেসবুকে পিকে টিভির পেজ থেকে দেয়া আরেকটি লাইভে ফয়সল কাদির বলেন, ‘ওই দিন আমি অসুস্থ ছিলাম। একটি পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমার মনমানসিকতা ও ভালো ছিল না। তাই কিছু উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে ফেলেছি। পুলিশ সদস্যদের মনে কষ্ট দিয়েছি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’

মোটরসাইকেল আটকানোর পর ফেসবুকের ওই লাইভে ফয়সল কাদিরকে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদের নাম একাধিকবার নিতে শোনা যায়। লাইভে তিনি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আমার মোটরসাইকেলে হাত দেবেন না। আমি ডিসি সাহেবকে ফোন দিচ্ছি। তিনি এখানে আসবেন। তারপর দেখব।’

এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘এই লোককে (ফয়সল কাদির) আমি চিনি না। অনেকেই তো আমাকে কল দেয়। সব কল রিসিভ করাও হয় না। ওই দিন তার সঙ্গে আমার কোনো আলাপ হয়নি। এর আগে কোনোদিন হয়েছে বলেও মনে করতে পারছি না।’

ফয়সল কাদির নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তার বিষয়ে সিলেটের মূলধারার সাংবাদিকেরা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, ‘মাতৃজগত নামে কোনো পত্রিকার নাম কখনো আমি শুনিনি। এই নামে কোনো পত্রিকা আছে কি-না, আমার জানা নেই। ফয়সল কাদির নামে কোনো সাংবাদিককেও চিনি না। তিনি সিলেটের কোনো সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যে কেউ একটি ফেসবুক পেজ খুলে নিজেকে সাংবাদিক, এমনকি সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দিচ্ছেন। এতে প্রকৃত সাংবাদিকেরাও বিপাকে পড়ছেন। দায়িত্ব পালনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা চাই এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হোক। যাতে কেউ সাংবাদিক পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।’

শেখ সোহান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন