আর্কাইভ থেকে ইউরোপ

গ্রীসে পানির নিচের জাদুঘর; মিলছে প্রাচীন সভ্যতা দেখার সুযোগ

সাধারণত সমুদ্রের নিচে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন দেখার সুযোগ পায় প্রত্নতাত্ত্বিক ও বিশেষজ্ঞরা। তবে গ্রীসে পানির নিচে জাদুঘর সেই সুযোগ এনে দিচ্ছে সাধারণ পর্যটকদের জন্য।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্যে গ্রীস বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দেশটির বিভিন্ন ঐতিহাসিক সম্পদ শুধু মাটির ওপরই নয়, ছড়িয়ে আছে পানির নিচেও। সেই ঐতিহাসিক সম্পদগুলোই এখন চাইলে দেখে নিতে পারবে সাধারণ দর্শনার্থীরা। এজিয়ান সাগরের উত্তরে অ্যালোনিসস দ্বীপের কাছে অবস্থিত গ্রীসের প্রথম পানির নিচের জাদুঘর সেই সুযোগ এনে দিচ্ছে।

২০২০ সালে খোলা হলেও মহামরির কারণে এখনো জাদুঘর প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে। সেখানে এখন প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পানির নিচের জাদুঘর ঘুরে দেখার সুযোগ পায় দর্শনার্থীরা।

জাদুঘরটির প্রায় ২৮ মিটার গভীরে প্রাচীন একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। জাহাজের কাঠ প্রায় পুরোপুরি ক্ষয়ে গেছে। শুধুমাত্র কিছু ওয়াইনের পাত্র দেখা যায়। জাহাজটি প্রায় আড়াই হাজার বছর পুরোনো এক বাণিজ্যিক জাহাজ বলে ধারণা করা হয়। অজানা কোনো কারণে আগুনে জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল বলে মনে করে জনসাধারণ।

পানির নিচের জাদুঘরের নিদর্শন দেখে পর্যটকরা এতটাই মুগ্ধ যে সেখানে ভ্রমণের জন্যে ৯৫ ইউরো বা ১১০ ডলার গুণতে কোনো কার্পণ্য করে না তারা। এই জাদুঘর ভ্রমণে যা খরচ হবে তা নিয়মিত বিনোদনমূলক স্কুবা আউটিংয়ের খরচের চেয়ে প্রায় ৫০ ভাগ বেশি। পানির নিচের এই জাদুঘর হতে পারে গ্রীসের পর্যটন শিল্পখাতের উপার্জনের বড় উৎস।

দেশটির বৃহত্তম সামুদ্রিক রিজার্ভের মধ্যবর্তী এ অঞ্চলে আরও ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করা হয়েছে। এ জাতীয় আরো জাদুঘর উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

গ্রীসের পর্যটনমন্ত্রী হ্যারি থিওরিস জানান, ২০২০ সালে আইন পাস হওয়ার পর দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ডাইভিংয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে গ্রীক সরকার।

তিনি বলেন, এটি এমন এক পর্যটনশিল্প যা সারা বছর মানুষকে আকর্ষণ করে। একটি বিশেষ শ্রেণী ডাইভিংয়ের জন্য মুক্তহস্তে অর্থ খরচ করে। এছাড়া এ ধরনের আরও নতুন ১০টি ডাইভিং পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা থাকার কথা জানান গ্রীসের পর্যটনমন্ত্রী।

অ্যালোনিসসোর মেয়র পেট্রোস ভ্যাফিনিস জানান, জাদুঘরটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন শ’ মানুষ জাদুঘরের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে এসেছে।

জাদুঘরে আগত সব দর্শনার্থীকে কিছু কঠোর নিয়মকানুন অবশ্যই মেনে চলতে হয়। যেমন; প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের চারপাশে কমপক্ষে দুই মিটার (প্রায় ৬ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া গ্রীক পর্যটক জর্জ গিয়াসেমিডিস বলেন, জাদুঘরে প্রবেশের পর থেকেই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি নিয়ে আমার প্রত্যাশা ছিল এবং তা সম্পূর্ণ পূরণ হয়েছে।

গভীরতা এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে শুধুমাত্র দক্ষ ডাইভারদের খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।

জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আশ-পাশে আরও চারটি ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়েছে। নতুন আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষগুলোতে সহজেই ভ্রমণ এবং অ্যালোনিসস দ্বীপে বিশ্বের ডুবুরীদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠাই আপাতত প্রধান লক্ষ্য।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন