আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

ভারতে তৃতীয় ঢেউ আসছে, মাস্কহীনরাই বিপদ ডাকছে

ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটের জের এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই যে কোন মুহূর্তে আছড়ে পড়তে পারে তৃতীয় ঢেউ। এ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ছড়াচ্ছে। মাস্ক না পড়ার প্রবণতা বিপদ বাড়াচ্ছে বলে দাবি করেছে বিশেষজ্ঞরা।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ এখনও পুরোপুরি যায়নি। এর মধ্যেই তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। যা নিয়ে চিন্তিত সব মহল।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, করোনা সংক্রমণ সামাল দেওয়ার একমাত্র হাতিয়ার মাস্ক, মাস্ক এবং মাস্ক। করোনা টিকার দু'টি ডোজ নেওয়া থাকলেও পরতেই হবে মাস্ক। সাধারণ মানুষের কাছে বার বার বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার ছাড়াও মাস্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ধারাবাহিক প্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন।

কিন্তু তা কি কানে তুলছে সাধারণ মানুষ? তুললেও কতটা সতর্ক তারা? এ নিয়ে পর্যালোচনার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সমীক্ষকরা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে, এখনও একটা বড় অংশের মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত করানো যায়নি। আবার যারা মাস্ক ব্যবহার করছে, তারাও বারবার বলা হলেও যথাযথভাবে মাস্ক পরছে না।

আরজিকর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও রাজ্যের কোভিড প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির সদস্য জ্যোর্তিময় পাল বলেন, সবার আগে নিজের ভালো নিজেকেই বুঝতে হবে। প্রতিটি মানুষের পিছনে একজন করে পুলিশ দিয়ে মাস্ক পরতে বাধ্য করা যায় না। মাস্কের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে নানা প্রচার চালিয়েছে সরকার থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপদ সবাই দেখেছে।

সমীক্ষায় জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার ৬২টি এলাকায় ৬৮.৩১ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে। যারা মাস্ক করছে তাদের মধ্যে ঠিকভাবে ব্যবহার করে না ২১.০৪ শতাংশ। আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১০৭টি এলাকায় নমুনা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৯.৬১ শতাংশ মাস্ক ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীদের ৩৩.০৩ শতাংশ আবার ঠিকভাবে মাস্ক পড়ে না। আবার ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলায় ৫৪টি এলাকায় মাত্র ৪২.৮৭ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরছে।

মাস্ক ব্যবহার নিয়ে এই অনীহা চিন্তায় ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হলেও আত্মশাসন তুলে নেয়নি রাজ্য সরকার। তার মধ্যেই কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে নিয়ন্ত্রণের আইন ভেঙে রাত ৯টার পর খোলা থাকছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বাজার। এরপরও মাস্ক যথাযথ ব্যবহার বাধ্য করা যাচ্ছে না। কেউ মাস্ক ব্যবহার করছে কিন্তু তা ঝুলছে থুতনির নীচে। কারও আবার মাস্ক দিয়ে নাক নয়, শুধু ঠোট চাপা দিয়ে রাখা হচ্ছে। সমীক্ষকরা দেখেছে, ২৪ জেলা শহরের ৬৫০টি এলাকায় ৫১.৬২ শতাংশ মানুষ নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করছে। কিন্তু ৩৫ শতাংশ যথাযথভাবে মাস্ক পরছে না।

স্বাস্থ্য দপ্তরের সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েই মাস্ক পরার ওপর আরও নজরদারি বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এরপরই পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরসহ কয়েকটি জেলার প্রশাসক মাস্ক নিয়ে নিচুতলায় কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে। ঠিকভাবে না পরলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি নবান্নের নির্দেশ, মাস্ক পরলেই হবে না ঠিকভাবে পরছে কি না তাও দেখতে হবে।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন