ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সৌদি আরবে সরকারি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে রিয়াদ।
আজ সোমবার (২০ মার্চ) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যাম বিবিসি এক প্রদিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে । সৌদি বাদশাহ সালমান চিঠি পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিভাবে এই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী এই দু’টি দেশ নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্টকে সৌদি সফরের আমন্ত্রণ জানানো হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের পাঠানো চিঠিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে রিয়াদে সরকারি সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সৌদি আরব এখনও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
বিবিসি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাস সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বৈরিতার কথাই বলে। তবে চীনের মধ্যস্ততায় সম্প্রতি ইরান এবং সৌদি আরব সাত বছর পর আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছে। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবার বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাও শুরু হবে।
সেই সাথে দুই মাসের মধ্যে দু’দেশ পরস্পরের রাজধানীতে তাদের দূতাবাসও খুলবে। যা পশ্চিম এশিয়ার এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিকে নতুন আকার দিতে পারে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান আরও বলেছেন, ইরান বাহরাইনের সাথেও সম্পর্ক উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। সৌদির ঘনিষ্ঠ মিত্র এই দেশটি ২০১৬ সালে রিয়াদকে অনুসরণ করে তেহরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, ইরান ও বাহরাইনের মধ্যে বিদ্যমান কিছু বাধা দূর হবে এবং আমরা দূতাবাসগুলো পুনরায় চালু করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ নেব।’
বাহরাইন অবশ্য ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যের এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে গত সপ্তাহে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য ইরান-সৌদি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে বাহরাইন।
এছাড়া জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য আঞ্চলিক আরব প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে সম্পর্ক পুনরায় শুরু করতে বা উন্নত করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে ইরান।
পৃথকভাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই দেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটি বৈঠক করতে সম্মত হয়েছে এবং বৈঠকের তিনটি সম্ভাব্য স্থানের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য তিনি স্থানগুলোর নাম বলেননি এবং ঠিক কবে এই বৈঠক হতে পারে তাও বলেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে হতে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সেবছর সৌদি আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে নাটকীয় অবনতি ঘটে।
মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।
এছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছে।